সর্বজনীন শিক্ষা ও কর্মনিয়োজন - Dainikshiksha

সর্বজনীন শিক্ষা ও কর্মনিয়োজন

এস ফাহিম |

প্রাণিজগতের জীবনধারণ, আত্মরক্ষা ও প্রজননের স্বভাবজাত জ্ঞান, পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার পর মানুষের চিন্তাশক্তির সৃজনশীলতা থেকে প্রাপ্ত উপলব্ধির উচ্চতর জ্ঞান ও ক্রমাগত শিক্ষালাভের ক্ষমতা মানুষকে প্রাণিজগতে স্বাতন্ত্র্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে। সৃজনশীল উপলব্ধির জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক ও ফলিত জ্ঞানকে সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উত্তরোত্তর উত্কর্ষ সাধনে বস্তুগত সমৃদ্ধি ও সভ্যতা সংহতকরণে সফল হয়েছে মানুষ। পৃথিবীর অঞ্চলভেদে ও জাতিরাষ্ট্রের পরিসীমায় মানুষের বস্তুগত সমৃদ্ধি ও সভ্যতা এক পর্যায়ের নয়। আন্তর্জাতিক, অভ্যন্তরীণ শ্রেণীগত প্রতিযোগিতা ও সংঘাত এ বস্তুগত সমৃদ্ধি ও সমাজ-সভ্যতায় বিস্তর বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তাই আজ কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা ও তার যথার্থ প্রয়োগই পৃথিবীতে উন্নত জাতি হিসেবে টিকে থাকার শর্ত তৈরি করেছে। শিক্ষার মান একটি জাতির সচেতনতা, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর্যায়ে আছে মাত্র। এরপর উন্নত দেশের পর্যায়ে যাওয়ার পথ বাকি আছে বহুদূর। এ পর্যায়েই দেশে প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন থাকার কথা ছিল। বাংলাদেশের সংবিধান বিধৃত নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব এ রাষ্ট্র তার ৪৭ বছরের জীবনে অর্জন করতে পারেনি। মাত্র ৬২ শতাংশ মানুষের কেবল সাক্ষরতা অর্জিত হয়েছে। তাই সময়ক্ষেপণের আর কোনো সুযোগ নেই। জাতির সব সম্পদ নিয়োজিত করে অবশিষ্ট ৩৮ শতাংশের সাক্ষরতাসহ সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাদানের কর্মসূচি চলতি পঞ্চবার্ষিক কর্মসূচিতে অর্জন করতে হবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় সব সম্ভাব্য সম্পদ নিয়োজিত করার কর্মকৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মী, প্রতিরক্ষা কর্মী-সহযোগে স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক ক্যাডার গঠন করে শতভাগ জনগণের শিক্ষা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পুরো জাতির মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কার্যকর শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য চলতি ও পরবর্তী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জন নিশ্চিত করার সমুদয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে সমাজনিষ্ঠ, উৎপাদনশীল ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তুলতে হবে। বিদেশী ভাবধারার অনুকরণে নয়, বরং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ জাতির নিজস্ব মননশীলতায় বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব সৃষ্টির গবেষণাকেন্দ্রিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। গণিত ও বিজ্ঞানশিক্ষা এবং চর্চাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বর্তমান বাংলা মাধ্যম শিক্ষাক্রমকে মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষাক্রম হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রকৌশল ও মেডিকেল শিক্ষা স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম করতে হবে, যাতে সমাজের ব্যাপক অংশ এসব শিক্ষাক্রমের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। মানবিক, বাণিজ্য তথা সমাজ ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রমে বাংলা মাধ্যমের কিয়দংশ এবং সব মাদ্রাসাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আইনশিক্ষা ও হিসাববিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে এ শিক্ষাক্রমের মূল বিষয় করা যেতে পারে। দেশের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাক্রমকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও স্বদেশমুখী করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা যেতে পারে, যাতে এ ধারার শিক্ষিত নাগরিকরা সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অধিকতর দক্ষতায় সেবা প্রদানে উপযোগী হয়ে ওঠেন।

রাষ্ট্রের কর্মবিভাগকে পুনর্গঠন করে মেধাভিত্তিক পরীক্ষায় সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন-উন্নয়ন ক্যাডার ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপক ক্যাডারে বিন্যস্ত করা যেতে পারে। বাকি সব শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জাতীয় সার্ভিস ক্যাডার থেকে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা ও পারদর্শিতার নিরিখে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদায়ন করা যেতে পারে। 

গণকর্মনিয়োজনের ফলে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ও রাজস্ব খাতে এক ধরনের বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। এ চাপের প্রতিক্রিয়ায় কর্ম খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে কার্যকর শিক্ষাক্রম উন্নয়নের একটি মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি হবে, যা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। দেশের উৎপাদন সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস ও জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টনের একটি প্রক্রিয়া চালু হবে। সমাজ সমৃদ্ধ হবে আর রাষ্ট্র শক্তিশালী হবে।

প্রতিটি নাগরিকের কাজের সুযোগ তার অধিকার। রাষ্ট্রকে এ সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি নাগরিক কর্মীর সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের স্বার্থেই প্রয়োজন। আর তাই সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে তার নিজ স্বার্থেই করতে হবে। এটাই হতে হবে আজকের রাজনীতির মূল অঙ্গীকার ও চ্যালেঞ্জ।

 

লেখক: প্রকৌশলী

 

সৌজন্যে: বণিক বার্তা

মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068719387054443