মাসিক সমন্বয় সভা, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতায় প্রধান শিক্ষককে প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয়। আর তখন রুটিনে থাকা তাঁর ক্লাসগুলো স্বভাবতই সহকারী শিক্ষকরা পরিচালনা করেন। যদিও তারা নিজেদের নির্ধারিত ক্লাস নিয়েই খুব ব্যস্ত ও ক্লান্ত।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পরিকল্পনাসহ শ্রেণি পাঠদানের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আরও হাজার রকমের কাজ করতে হয়। ভর্তি রেজিস্টার, বই বিতরণ, প্রতি মাসে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ, উপবৃত্তির নানা রকম কাজ, ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষককে। এসব কাজের ব্যস্ততা ও চাপে মানসম্মত ও প্রত্যাশিত পাঠদান অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে যায়। আর বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের দরূন দিশেহারা হয়ে যান সম্মানিত শিক্ষকরা।
ফলে কালেভদ্রে কোনও কোনও বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরীকে দিয়ে শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের হট্টগোল নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখাকে ফলাও করে সংবাদপত্রে ‘দপ্তরিকে দিয়ে পাঠদান’ শিরোনামে তুলে ধরে শিক্ষকদের গাফিলতি ও অদক্ষতা বলে চালানো হয়। এক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষককে যাবতীয় লেখালেখির কাজে সহায়তা করার জন্য একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ করলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা যেমন অকারণ কাজের চাপ থেকে রেহাই পান, তেমনি তাঁরা শ্রেণি পাঠদানে হতে পারেন শতভাগ স্বতঃস্ফূর্ত। একইসাথে সৃষ্টি হবে ৬৬ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান।
অথচ তার বদলে বিদ্যালয়ে নতুন করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে তাতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ও মানের ঠিক কেমন উন্নতি হবে তা বোধগম্য নয়। এছাড়াও সৃষ্টি হবে না নতুন কর্মসংস্থানের।
তাই, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সহযোগিতা করা, অন্যান্য শিক্ষকদের উপর থেকে পাঠদান বহির্ভূত কাজের বোঝা অপসারণ করে প্রত্যাশিত মানের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত ও অর্ধ লাখেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির পরিবর্তে একজন করে অফিস সহায়ক নিয়োগ দেয়া হোক। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত করতে স্কুলে অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টির বিকল্প নেই।
লেখক : আবু ফারুক, সহকারী শিক্ষক, ভাগ্যকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, বান্দরবান।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]