ব্যানারে ‘সাইফুর’স কোচিং সেন্টার’ এর লোগো থাকায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, সাইফুর’স জামায়াতের কোচিং সেন্টার। একই বিষয়ে আপত্তি তুলে একইসঙ্গে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
শুক্রবার ডিআরইউ’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংগঠনের সদস্যদের সন্তানদের মধ্যে পিইসি ও জেএসসিতে কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী ৪০ জন শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। এতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রধান অতিথি ও ঢাবির ভিসি আরেফিন সিদ্দিককে বিশেষ অতিথি করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানটির স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সাইফুর’সের চেয়ারম্যান শামস আরা খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান খানকেও অতিথি করা হয়।আজ ৬ মে (শুক্রবার) নির্ধারিত সময় বেলা ১১টার পরপরই আইনমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ডিআরইউ’র একটি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানের ব্যানারে সহযোগিতায় ‘সাইফুর’স প্রাইভেট লিমিটেড’ লেখা দেখে আপত্তি তোলেন আইনমন্ত্রী।
এই প্রতিষ্ঠানটি ‘বিতর্কিত’, তাই এই অনুষ্ঠানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না বলে ১ মিনিটের মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান তিনি। এ সময় ডিআরইউ সভাপতি জামাল উদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। একই কথা বলে মন্ত্রীর সঙ্গে সেখান থেকে চলে যান অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন, শুক্রবার আমি ঢাকায় থাকি না, সাধারণত নিজ এলাকায় যাই। আমার এলাকার অনুষ্ঠান বাতিল করে আমি সাংবাদিকদের ডাকে সাড়া দিলাম, কিন্তু তারা আমাকে সেখানে নিয়ে এক বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিলো! ওখানে সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের অর্থায়নে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এটি জামায়াতের কোচিং সেন্টার। আর দেশে কোচিং সেন্টার বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে, তাই আইনমন্ত্রী হিসেবে আমি সেখানে থাকতে পারি না। আর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে আরেফিন সিদ্দিকিও সেখানে থাকতে পারেন না। সেজন্য আমরা দু’জনই বের হয়ে এসেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। তাই যে অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় সাইফুর’স-এর মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেখানে আমার বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আরও বলেন, ‘আজ বেলা ১১টার দিকে একটি সংবাদ সম্মেলন ছিল আমার। সেটা বাতিল করে আমি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অনুষ্ঠানে যাই। কিন্তু আমাকে যদি আগে বলা হতো- ওই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক সাইফুর’স, তাহলে আমি সেখানে থাকতাম না। আমি অনুষ্ঠানটি আগেই বাতিল করতাম।’
চাঁদাবাজির দায়ে অভিযুক্ত, ভুইফোঁড় ও নিবন্ধনহীন অভিভাবক ফোরাম ও এর স্বঘোষিত সভাপতি আইসিটি মামলার আসামী জিয়াউল কবীর দুলু গংকে ইতিমধ্যে বর্জন করেছেন ঢাবি ভিসি। গত ২৮ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে ভুইফোঁড় অভিভাবক ফোরাম একটি তথাকথিত গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছিল। ঢাবি ভিসি জানতে পারেন ওই চক্রটি প্রতিক্রিয়াশীল, চাঁদাবাজ ও শিক্ষাবিদদের নাম বিক্রি করে খাওয়ার কাজে নিয়োজিত বহুবছর যাবত। প্রধান অতিথি হিসেবে নাম থাকলেও ভিসি ওই অনুষ্ঠানে যাননি।
জানা যায়, অতিথিরা যাওয়ার পর সাইফুর’স প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামস আর খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান খানকে নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন ডিআরইউ নেতারা। কৃতিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন সাইফু্রস’র কর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ওনারা বলেছেন সাইফুর’স নিষিদ্ধ, তাই চলে গেছেন। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, অনুষ্ঠানটি অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর ইংরেজি শেখানোর নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘দক্ষ হ্যাকার’ বানানোর প্ররোচনার অভিযোগ ওঠার পর কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে মামলা দায়ের ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরপরই সরকারের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করতে সাংবাদিক পরিচয়ধারী চার শিবিরকর্মীর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বৈঠকের অভিযোগ ওঠে। পরে লিখিতভাবে দুদককে অনুসন্ধান করতে সুপারিশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর রমনা থানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য রমনা থানা পুলিশ কোচিং সেন্টারটির লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এদিকে সাইফুরস কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাইফুরসের সব ধরনের কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সব আয়কর নথিও খতিয়ে দেখছে দুদক। তাদের আয়–ব্যয়ের সব হিসাবও পেশ করতে হবে দুদকে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।