ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সান্ধ্য কোর্স চালু করা হয়। একই পথ ধরে এখন সারা দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় শতাধিক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে নামে বেনামে চলছে এ সান্ধ্য কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়ের বড় উৎস হিসেবে এ কোর্স চালু করার কথা বললেও এ নিয়ে রয়েছে নানা বিরক্তি। সর্বশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সান্ধ্য কোর্সের তীব্র সমালোচনা করেন। এরপর তা বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এর পরিস্থিতিতে সান্ধ্য কোর্স এখনই বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সান্ধ্য কোর্স অবশ্যই বন্ধ করা উচিত এবং একই সঙ্গে অধিভুক্ত সাত কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্মুক্ত করা উচিত। তাহলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব গতিতে চলতে পারবে। ফিরে আসবে হারানো ঐতিহ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক সান্ধ্য কোর্স পক্ষে সাফাই গাচ্ছে, এমনকি দাবি করছেন সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ করে কোনো লাভ হবে না। কোর্সের গুণগতমান পরিবর্তন করা দরকার। তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সান্ধ্য কোর্স ভারসাম্যহীন একটি কোর্স। যারা সান্ধ্য কোর্সে পড়াশোনা করেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা এটাই আমার প্রশ্ন। নিম্নমানের পড়াশোনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পান তারা। আসলে লেখাপড়া গুণগতমান উৎকর্ষ সাধন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যেহেতু সান্ধ্য কোর্সের মাধ্যমে এখন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। শিক্ষকদের মাথায় রাখা উচিত, এ কোর্সে লেখাপড়া অবশ্যই ভালো হওয়া দরকার। সেদিক থেকে আমি অবশ্যই সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ করার পক্ষে।
ইউজিসি থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আসলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সান্ধ্য কোর্স বন্ধের পক্ষে। কিন্তু এ সান্ধ্য কোর্স থেকে যারা লভ্যাংশ পান বা যাদের স্বার্থ রয়েছে, তারা এ কোর্স বন্ধের বিপক্ষে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের স্বার্থের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাতে বলি না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
সান্ধ্য কোর্স বন্ধ করতে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে কি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব শিক্ষকের সান্ধ্য কোর্সে স্বার্থ আছে। তারা অবশ্যই এ কোর্স চালু রাখার পক্ষে থাকবে। এমনকি দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চেষ্টা করবে। এ দ্বন্দ্ব তৈরির মাধ্যমে তারা এ কোর্স বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষার্থী সান্ধ্য কোর্সের বিপক্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক এর বিপক্ষে। এমনকি উপাচার্য নিজেও এর বিপক্ষে। আশা করা যায় এবার সন্ধ্যা কোর্স বন্ধ হবে।
এতদিন ধরে সান্ধ্য কোর্স চলে এলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন যেভাবে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের বড় আওয়াজ উঠেছে। রাষ্ট্রপতি নিজে এর বিপক্ষে কথা বলেছেন। এ কথার সঙ্গে সঙ্গে ইউজিসি সান্ধ্য কোর্স বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে। আশা করছি, এবার সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ হবে। এছাড়া সান্ধ্য কোর্স পরিচালনাকারী শিক্ষকদেরও বড় সিন্ডিকেট ছিল। এছাড়া আগে এ কোর্স বন্ধে নেতৃত্ব দেয়ার তেমন কেউ ছিল না। এখন রাষ্ট্রপতি নিজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অবস্থাটা এমন ছিল বিড়ালের গলায় কে ঘণ্টা বাঁধবে, এখন তো রাষ্ট্রপতি নিজেই ঘণ্টা বেঁধে দিয়েছেন। ইউসিসি তার সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছেন। আশা করছে এ বিষয়ে এবার একটা কিছু হবে। এবার যদি না হয় আর বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।