দুনিয়ায় কর্মক্ষেত্রের অভাব নেই। শহরের রাস্তার পাশে যে ছোটো রাস্তাটা থাকে সেখানে ছোট্ট একটা বাতির নিচে কিছু জিনিসপত্রের বেচা-কেনাও কয়েকটা জীবন বাঁচিয়ে দিচ্ছে। পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকলে কোথাও ঠাঁই হবে না। উপযুক্ত প্রার্থীদের মূল্যায়ন হবেই। সেটা কেবল সময়ের ব্যাপার। অনুপযোগী মানুষগুলোর একই লাইনে চলে আসাটা কেবল লাইনটাই বড়ো করে মাত্র, তাদের আটকাতে পারে না। লক্ষ্যটা কেবল সাফল্যের দিকেই থাকা উচিত। জন্মটা যেখানেই হোক, কর্মটা যেন ভালো হয় সেটাই যেন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ওয়ার্কশপ খারাপ জায়গা না। প্রতিটা কর্মকে সম্মান করলে আমাদের এই দুর্দিন দেখতে হতো না। ‘আমি লাখ টাকাতেই চাকরি করব, নতুবা কিছুই করব না।’ আমাদের এই আত্মঘাতী ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের এটা কে বুঝাবে? ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে না দিয়ে একটু পরিশ্রম করুন। সফলতা একদিন ঠিকই ধরা দিবে। কেননা, সফল-বিফলতার চাবিটা তো আপনারই হাতে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, বাঙালিরা সত্যিই এক অলস জাতি। আমিও নিশ্চয় এর বাইরে নই। যাদের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার কিন্তু কাজের বেলায় তার কিছুই নেই। কাল-মহাকাল ধরে অলসতার চর্চা করতে করতে এটাই এখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে আর মিশে গেছে প্রতিটা রক্তকণিকায়। তাদের এই অলসতার প্রায়শ্চিত্ত করছে আমাদের যুব সমাজ! অনুকরণপ্রিয়তা আজ আমাদের ধ্বংস করে দিল। নামিয়ে দিল সভ্যতার নিম্নস্তরে। আমরা কথায় বিশ্বাসী হলেও, কাজে বিশ্বাসী নই। স্বপ্ন কিংবা ইচ্ছে পূরণে আমাদের যে দীর্ঘসূত্রতা, সেটা আমাদের আরো একধাপ পিছিয়ে দিল। সভ্যতার চরমে ওঠার একমাত্র হাতিয়ার যে পরিশ্রম, এটা আমরা বুঝি না। কোনো রকম বেঁচে থাকতে পারলেই যেন হলো। আর এই প্রবণতা দিন দিন আমাদের গ্রাস করছে। ডুবিয়ে দিচ্ছে কিছু সুপ্ত স্বপ্ন আর বন্ধ করে দিচ্ছে নতুন দিগন্তের পথে সৃষ্টি হওয়া সরু পথটাও।
আমাদের পরাজয়ের পেছনে একটা কারণ দাঁড় করানো যায়। আমরা যখন কোনো স্বপ্ন দেখি, তখন অনেক বড়ো স্বপ্ন দেখি। আমাদের পরিবেশ আমাদের দেখতে বাধ্য করে অনেকটা। কিন্তু যখন আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি না, তখন শুরু হয় হতাশা। এই হতাশা চারদিক থেকে ঘিরে ধরে আমাদের। অথচ নিজেদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটাবারও জানা হয়নি। প্রশ্ন করা হয়নি, আমরা কতটুকু জানি বা আমাদের জানার পরিধি ঠিক কতটা প্রশস্ত। আমার মতে এমন স্বপ্ন দেখা উচিত নয় যেটা আমাদের নিজেদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। সামর্থ্যের বাইরে স্বপ্ন দেখাটা আমার চোখে একপ্রকার অপরাধই। যার শাস্তিস্বরূপ আসে হতাশা। প্রতিদান দিতে হয় নিজেকে, পরিবারকে। অথচ যে সমাজ আমাদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা দেখিয়েছিল তারা এখন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমন স্বপ্ন দেখবই বা কেন যা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। অনিশ্চিত প্রত্যাশার চেয়ে, হাতে পাওয়া অল্প কিছুটাও যে অনেক ভালো সেটা আমাদের কে বুঝাবে? সুতরাং প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করুন, কতটুকু পারবেন। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন সবার পূর্ণ হয় না, হবেও না। আমি- আপনি সেই পথ চেয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না। কাউকে স্বপ্ন দেখাতেও একবার ভেবে নেবেন। তার যোগ্যতার হিসেব কষেই পথ দেখাবেন। এতে দুজনেরই মঙ্গল হবে। নিজের সামর্থ্যের মধ্যে কিছু করুন, করার চেষ্টা করুন। ইনশাল্লাহ ভালো থাকবেন। হতাশা আপনার ছায়াও মাড়াবে না।
‘সফলতা’ চারটি কথার ফুলঝুরি নয়, যে মুখে বললেই হয়ে যাবে। সফলতা এমনও নয়, যে পাহাড় কেটে নদী বানাতে হবে। সফলতা আসলে একটা ব্যতিক্রমী বিষয়। তার চেয়েও ব্যতিক্রমী বিষয় হলো আমাদের চিন্তা-চেতনা। মূলত এটাকে কে কিভাবে নেয় সেটাই মূল বিষয়। একজন দোকানদারের একদিনে ১ হাজার টাকা আয় করা তার কাছে একটা যুদ্ধ জয়ের সমান। আর তার কাছে এটাই সফলতা। কারো কাছে এই ১ হাজার টাকাই আবার সামান্য কিছু। সফলতাটা আসলে একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিতুষ্টির বিষয়। যেখানে একটা মানুষের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রত্যাশার সার্থক বাস্তবায়নই তার কাছে সফলতা। সফলতা ঠিক যেমন ছোটো হতে পারে,আবার এর বিস্তৃতি হতে পারে আকাশ সমান। আমার কাছে কঠোর পরিশ্রমের পর কোনো একজনের স্বপ্ন পূরণ হবার ঘটনাটাই সফলতা। সফলতাটা মূলত কোনো একটি পরিশ্রমের পারিশ্রমিকস্বরূপ। যেখানে প্রত্যাশিত কিছু একটা পাওয়ার জন্য কোনো একজন কলুর বলদের মতো পরিশ্রম করে দিনশেষে তার যথোপযুক্ত প্রাপ্যটা পায়। তার কাছে এটাই তার সফলতা। বার বার অকৃতকার্য হওয়া ছাত্রটির কাছে টেনেটুনে কৃতকার্য হওয়াটাই হলো সফলতা। কিন্তু বর্তমানে মানুষ ভাবে ভিন্ন কিছু। আমাদের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। কিন্তু পরিশ্রমের বেলায় কারো খবর নেই। স্বপ্ন বাস্তবায়নে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে আমাদের দেখা যায় না। অথচ দিনশেষে এই মানুষগুলোই নিজেদের ব্যর্থ বলে জাহির করে। দিনে দিনে ব্যর্থতাটাও একটা সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। যেখানে কেউই এই ব্যর্থতার দুর্নাম ঘোচাতে এগিয়ে আসে না। এক পা এগোয় তো দুই পা পিছিয়ে যায়। সফলতা অর্জনে যেটুকু ধৈর্য প্রয়োজন সেটুকুই আমাদের নেই। অপেক্ষার প্রহর আর কঠোর পরিশ্রমের পর নিজের ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষা কয়জনই বা দিতে পারে? সফলতা তাদেরই পাওয়া উচিত যারা অন্তত ধৈর্যের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইতিবাচক মন-মানসিকতা রাখে। সফলতা অর্জনে শেষ লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের ধৈর্যশীল হওয়া উচিত। শূন্য থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিষয়টাকে একাধিক ভাগে ভাগ করে একটু একটু করে এগিয়ে গেলেই দিনশেষে সফলতা ধরা দেবে। ধৈর্যবান মেধাবী এবং পরিশ্রমীদের সফলতা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক : মো. রাফছান আহমেদ, শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।