এবারের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) বা সমমানের পরীক্ষা বাতিল করে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত হয়নি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে করোনা পরিস্থিতির কারণেই সরকারকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
পরীক্ষা না হলে নিশ্চিতভাবেই এরকম অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, তারা এতদিন ধরে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে, তাদের সে মূল্যায়ন কিন্তু হচ্ছে না। তাই সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে অনেকেই উপকৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
দ্বিতীয় বিষয় হলো এখন সব কিছুই প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলছে। হাট-বাজার, অফিস-আদালত, ট্রেন-গণপরিবহন সবই চলছে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও বাড়িতে বসে নেই। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সরকার কেন্দ্রের সংখ্যা দ্বিগুণ করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষাটি সশরীরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
জেএসসির কথা বলি। অষ্টম শ্রেণি শেষে যে বয়সে জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তখন শিক্ষার্থীদের পরিপকস্ফতা আসে না। এ সময় অনেকেই মুখস্থবিদ্যার জোরে ভালো ফল করে। মূল্যায়নের জন্য জেএসসির ফল গ্রহণ যথোচিত নয়। সেদিক থেকে এসএসসি ঠিক আছে। তবে কথা হলো এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীরা যে গুরুত্ব দেয়, তার চেয়ে অনেকে অনেক বেশি মনোযোগ দেয় এইচএসসিতে।
কেবল উচ্চশিক্ষার জন্য নয়, একইসঙ্গে জীবনের জন্যও এইচএসসিকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে নাকি মেডিকেল, কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তির ভিত্তিটা কিন্তু এইচএসসি। এ সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেভাবে অগ্রসর হয়। ফলে দেখা গেছে, অনেকে হয়তো জেএসসি কিংবা এসএসসিতে তেমন সিরিয়াস ছিল না কিন্তু এইচএসসিতে এসে উঠেপড়ে লাগে।
আমি মনে করি সরকারের এই সিদ্ধান্তে সূদুরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এছাড়া অনেকে বিদেশে পড়তে যায়, এখন পরীক্ষা ছাড়াই এই মূল্যায়নকে কিভাবে গ্রহণ করা হবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। আরেকটি সমস্যা হলো এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে যখন চাকরির খোঁজে যাবে, তখন চাকরিদাতারা বলতে পারেন ‘ও, তুমি তো ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ‘অটোপাস’। এতে তারা হেয় প্রতিপন্ন হতে পারে।