সিনিয়র পেনশন ভোগীদের আর্তনাদ - দৈনিকশিক্ষা

সিনিয়র পেনশন ভোগীদের আর্তনাদ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

করোনা ভাইরাসে প্রবীণদের সুরক্ষার জন্য অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রবীণরা স্বভাবতই শারীরিভাবে দুর্বল থাকে। তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কম। এতে খুব সহজে করোনা ভাইরাসসহ যে কোনো রোগে তারা আক্রান্ত হন। প্রবীণদের সুরক্ষার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ ঔষধপত্রের প্রয়োজন।

প্রবীণদের সুরক্ষার বিষয়ে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। ৩০-৪০ বছর সরকারি চাকরি করার পর তারা বর্তমানে কেমন আছেন? এ খবর ও উপলব্ধি বোধ অনেকের মাঝে নেই। এমনকি চাকরিরত অনেক সহকর্মীদের মাঝেও নেই।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির শারীরিক, আর্থিক অবস্থা কেমন এ নিয়ে টেলিফোনে খোঁজ-খবর নেয়ার বিষয়টি অনেকের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে। খোঁজ না নেয়াদের সংখ্যা বেশি হলেও খোঁজ-খবর নেয়ার লোকও যে একেবারে নেই তা বলা যাবে না। পারিবারিক পরিমণ্ডলে ছেলে, মেয়ে, জামাই, নাতি, নাতনি, পাড়া-প্রতিবেশীসহ সবার বদ্ধমূল ধারণা চাকরি শেষে তিনি ঘরে বসে বসে পেনশন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পান। অনেক আত্মীয়-স্বজন আর্থিক সহযোগিতার পরিবর্তে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশাও করেন। তাদের এ প্রত্যাশাও অযৌক্তিক নয়।

পরিবারে আমরা ২ ভাই শিক্ষক। ছোট ভাই শিক্ষকতা পেশায় যা ইনকাম করে আত্মীয়-স্বজনসহ পরিবারের চাহিদা মেটায়। আমি চাকরিরত অবস্থা থেকেই ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ প্রবাদের মতো কোনোরকম চলে এসেছি। আত্মীয়-স্বজনকে সহযোগিতা দূরে থাক, নিজের অভাবের মাঝেই ঘুরপাক খেয়েছি, খাচ্ছি।

দুই ভাই শিক্ষক হলেও প্রাতিষ্ঠানিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। আমি ১০ বছর পূর্বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলাম। ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

শিক্ষকদের মতো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের অভাব, অসহায়ত্বের মধ্যে কম যেতে হয়। কারণ বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বস্তরের সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুন করেছেন। যার ফলে অভাব অনটন অনেকটা তাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে। অথচ চির অভাব আজও প্রবীণ পেনশন ভোগীদের আঁকড়ে রেখেছে।

বিগত ২ বছর আগে দুই রকমের পেনশন ভোগী ছিল। কেউ শতভাগ পেনশনের টাকা একবারে নিয়ে নিতেন। তারা মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতা ছাড়া আর কিছুই পেতেন না। অন্যরা ৫০ শতাংশ টাকা উত্তোলন না করে মাসে মাসে পেনশন পেতেন। যারা পুরো টাকা উত্তোলন করেছেন, নানা কারণে তা খরচ করে তাদের অধিকাংশই আজ বড় অসহায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শতভাগ উত্তোলনকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের এ করুণ অবস্থার প্রেক্ষিতে পেনশন ভোগের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের আদেশ দেন। যার ফলে কিছু প্রবীণ কর্মচারীরা পড়ন্ত বয়সে আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন।

নগন্য সংখ্যক সরকারি কর্মচারীই ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। এর ফলে স্বল্প সংখ্যক কর্মচারী এর আওতায় এসেছেন। যেহেতু বর্তমানে আর নতুনভাবে শতভাগ পেনশন পাওয়ার সুযোগ নেই, আর কোনো পেনশন ভোগীর সরকারি আর্থিক সংশ্লেষও নেই, সেহেতু ৬৫ বছর বয়সের পর শতভাগ পেনশন ভোগীদের পেনশন পুনঃস্থাপনের সুযোগ দিলে অধিকাংশ পেনশন ভোগী বেঁচে থাকা অবস্থায় সরকারের এ সুযোগ লাভ করে উপকৃত হতেন। প্রবীণ অসহায় পেনশন ভোগীদের সুরক্ষার পথ বিস্তৃত হতো।

অপরদিকে প্রবীণ পেনশন ভোগীদের বর্তমান নতুন পেনশন ভোগীদের তুলনায় অতি নগন্য টাকা পেয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে একটি গানের দুটি লাইন উপস্থাপন করছি- ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে’। স্বাভাবিকভাবে চাকরিকালীন সিনিয়র জুনিয়র থেকে আনুপাতিক হারে বেতন ভাতা বেশি পেয়ে থাকেন। এটি একটি চিরন্তন নিয়ম। অথচ প্রবীণ পেনশন ভোগীদের ক্ষেত্রে নিয়ম উল্টো। যে যত বেশি সিনিয়র তিনি তত কম টাকা পেনশন পান।

আমার সমপর্যায়ের সরকারি কর্মচারী বর্তমানে ৫০ শতাংশ পেনশন হস্তান্তর করে মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। অথচ ১০ বছর আগে অবসরে যাওয়ার ফলে আমি পেয়ে আসছি ৬-৭ হাজার টাকা। পেনশনের ক্ষেত্রে যে যত বেশি সিনিয়র তার তত কম টাকা।

সিনিয়র নাগরিকদের শারীরিক সুস্থতা ও স্বাভাবিক মানুষের মতো বেঁচে থাকার জন্য জুনিয়র পেনশন ভোগীদের মতোই বেশি টাকার প্রয়োজন। আজ প্রবীণ পেনশন ভোগীরা অভাব ও অসহায়ত্বের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। করোনা ভাইরাসসহ সব সময় প্রবীণরা ঝুঁকিতে থাকেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কতিপয় যৌক্তিক সুপারিশ জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

  • সবচেয়ে অসহায় প্রবীণ যারা তাদের শতভাগ পেনশন উত্তোলন করে আজ অধিকাংশ প্রায় সর্বশ্রান্ত। তাদের ৬৫ বছর বয়সের পর থেকে পেনশন পুনঃস্থাপন করে সুরক্ষার আওতায় আনা হোক।
  • পেনশন ভোগীদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে নতুন পুরাতনদের মধ্যে বৈষম্য দূর করা হোক।
  • পেনশন ভোগীদের চিকিৎসা ভাতা ২৫০০ টাকা। ৬৫ বছর বয়সের পর তা ৫০০০ টাকা করার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা সেবা সুরক্ষিত করা হোক।
  • অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহ ঋণের ব্যবস্থা করা হোক।
  • প্রতি বছর মূল বেতনের সমপরিমাণ শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা দেয়া হোক।
  • প্রবীণদের জন্য বিনা খরচে আধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
  • করোনা ভাইরাসে আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক।

প্রবীণদের সুরক্ষা দেয়া সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রবীণদের মায়া-মমতার বন্ধনে বেড়ে উঠুক আগামীর সমাজ। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রবীণদের সুরক্ষায় ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন। এ ভরসাই রইলো।

মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065479278564453