সিনিয়র পেনশন ভোগীদের যন্ত্রণার ঈদ - Dainikshiksha

সিনিয়র পেনশন ভোগীদের যন্ত্রণার ঈদ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

আসছে ঈদুল আজহা। ঈদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের লোকজন পূজা পার্বণসহ নানা উৎসব পালন করবেন। বাঙালি জাতির ধর্মীয় পর্ব পৃথক হলেও উৎসবের আমেজ সবার মধ্যেই বিদ্যমান। কিন্তু, বহু বছর ধরে ঈদুল আজহায় কোরবানী দেয়ার প্রথাটি আর্থিক দৈন্যতার কারণে হারাতে বসেছেন সিনিয়র পেনশনভোগীরা। 

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের আগে বেতন স্কেল কম থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানো ছিল সরকারি কর্মচারীদের জন্য কষ্টসাধ্য। সে সময়ের আগে পেনশনভোগীদের মাসিক পেনশন ও বেতন ছিল অতি নগণ্য। প্রবীণ সরকারি কর্মচারীরা জীবন-যৌবনের পুরো সময় শ্রম ও মেধা দিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করলেও পড়ন্ত বয়সে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের যন্ত্রণার সাথী হয়ে আজকের লেখার অবতারণা।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে পিআরএল ভোগের পর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমার পেনশন শুরু হয়। তখন যদি পুরো পেনশন উত্তোলন না করতাম তবে আমার মাসিক পেনশন হতো ৫ হাজার টাকা। ১০০ ভাগ পেনশন উত্তোলন করায় বর্তমানে ৭০০০ টাকা হারে দুই ঈদে উৎসব বোনাস পাই। অথচ আমার সমকক্ষ আজকে পেনশন পায় ৫০ ভাগ, কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। তারা এককালীন ৩০ লাখ টাকাও পায়। 

চাকরিরত অবস্থায় প্রবীণরা জুনিয়র হতে বেতন বেশি পায়। পেনশনের ক্ষেত্রে এ উল্টো চিত্র। প্রবীণরা জুনিয়রদের থেকে কম পেনশন পায়। চাকরিরত অবস্থায় আমি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে হার্টের বাইপাস অপারেশন করে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেষ করে অনেক দেনা হয়েছি। পরবর্তীতে শতভাগ ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এককালীন তুলে ব্যবসার জন্য ছেলেদের টাকা দিয়েছি। কিন্তু, ব্যবসায় লোকশানের পরে আজ আমি নিঃস্ব। 

এ ছাড়া পেনশনভোগীদের এককালীন টাকার ওপর পরিবারের ও আত্মীয়-স্বজনের চোখ পড়ে। কেউ কেউ নানা ব্যবসার কথা বলে টাকা ধার নেয়। এ টাকা যথাযথভাবে না পাওয়ায় অনেক পেনশনভোগী আজ অসহায়। ব্যবসায়ে লোকসানে আজ অনেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সে প্রেক্ষাপটে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ পেনশনের টাকা না উঠানোর আদেশ অধিকতর শ্রেয়। 

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর সরকার পেনশন সমর্পনকারী প্রজাতন্ত্রের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করণার্থে, তাদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী সরকারি কর্মচারীদের অবসর গ্রহণের তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হবার পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে। যা অসহায় প্রবীণ পেনশন ভোগীদের জন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে, সাধারণত ১৫ বছর পর খুব কম সংখ্যক পেনশনভোগী বেঁচে থেকে এ সুযোগ ভোগ করতে পারে। পেনশন ভোগের পর কর্মহীন অবস্থায় অনেকে শারীরিকভাবে দুর্বল ও চলাফেরার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 

অপরদিকে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের দুইটি ঈদ উৎসব ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয় না। কর্মরত কর্মচারী ও সব পেনশনারকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হলেও পবিত্র ঈদে উৎস ভাতায় বৈষম্য সৃষ্টি করা কতটুকু যৌক্তিক তা সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সাথে ভেবে দেখবেন। ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করার প্রবণতা আমাদের সমাজে রয়েছে। শিশু জন্মের পর অসহায় থাকে। পরিবারে বড়দের সহযোগিতা ছাড়া তারা চলতে পারে না। অনুরুপভাবে প্রবীণরা শারীরিক ও মানসিকভাবে শিশুদের মত অসহায় ও দুর্বল। পরিবারে ছেলেমেয়ে বা আপনজনরা তাদের দেখভাল করেন। বিষয়টি পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম। আত্মীয়-স্বজন, ছেলে মেয়ে, নাতি, নাতনী, জামাই সবার ভাবনা তিনি একজন পেনশনার। বৃদ্ধ বয়সেও সরকারি টাকা পান তিনি। কত পান বা কী কী খাতে পায় তা কতজনই খোঁজ রাখেন। পেনশনভোগীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তারা পেনশন পান, তাই নাতি-নাতনী, মেয়ে, জামাইসহ পরিবারের অন্যান্যয় সদস্যদের আবদার বা দাবি মেটাতে হয়।

পেনশনভোগী শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বা স্বস্তির জন্য কোনো কাজে থাকা বা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো প্রয়োজন। কর্মহীন ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য অনেকে ঘরে বসে থেকে রোগে শোকে অনেকটা আধমরা বা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েছে। প্রবীণ পেনশনভোগী অনেকটা অসহায়। তাদের সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সবার। সরকারি কর্মচারী হিসেবে মুখ্য দায়িত্ব সরকারের। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিবের কাছে পেনশনভোগীদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে কতিপয় সুপারিশ উত্থাপন করছি:

* যেহেতু কর্মরত সরকারি কর্মচারী ও ৫০ ভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পায়। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীরা শুধু দুইটি ঈদ বোনাস পান। তাদের শুধু ঈদের বোনাসে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয় না। ৫০ ভাগ সমার্পনকারী পেনশনভোগীর মতো শতভাগ সমার্পনকারী পেনশনভোগীদেরও ঈদ বোনাসে ৫ শতংশ ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সবিনয় নিবেদন জানাচ্ছি। 

* শতভাগ পেনশনের উত্তোলনকারী কর্মচারীরা আজ নিঃস্ব। ১৫ বছর পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক সরকারি পেনশনভোগী বেঁচে থাকে। সরকারি কর্মচারীদের শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের সংখ্যা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের পর আর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। সেহেতু শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের অধিকতর আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ১৫ বছরের জায়গায় ১০ বছর পেনশন কার্যকাল পূর্তিতে পেনশন পুনঃস্থাপন করার যুক্তিটি ভেবে দেখা প্রয়োজন।

* অবসর গ্রহণের পর চিকিৎসা ভাতা কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ৬৫ বছর পর ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করার আবেদন জানাচ্ছি। কারণ, শেষ বয়সে স্বাভাবিকভাবে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। নবীনদের থেকে প্রবীণদের চিকিৎসা খরচ বহুগুণ বেশি। যেহেতু পেনশনভোগীদের কোনো যাতায়াত ভাতা নেই তাই তাদের বাস, লঞ্চ, রেলগাড়িসহ বিমানে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হোক।

* প্রবীণদের চিকিৎসায় সব হাসপাতালে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি বা প্রবীণ হাসপাতাল স্থাপন করাসহ পেনশনভোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত পৃথক হাসপাতালের দাবি জানাচ্ছি।

* অবসর গ্রহণের পর নিজ কর্মস্থলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খণ্ডকালীন কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

* প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষক সংকট জন্ম থেকেই। এ সংকট নিরসনে সদ্য অবসরপ্রাপ্তদের খণ্ডকালীন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ দিলে প্রাথমিক শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক পাবে। প্রবীণরা কর্মক্ষম থেকে শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে। 

* বর্তমান জনকল্যাণমুখী সরকারের প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের জন্য আরও অধিকতর যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ প্রত্যাশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন প্রবীণ পেনশনভোগীরা। 

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিকশিক্ষা ডটকম।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074911117553711