সীসা বিষক্রিয়ায় শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ - দৈনিকশিক্ষা

সীসা বিষক্রিয়ায় শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সীসা বিষক্রিয়ায় শিশু মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। পিওর আর্থের সহযোগিতায় সংস্থাটির করা নতুন এই বৈশ্বিক গবেষণায় জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটি শিশুর শরীরে  ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা রয়েছে।

ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি তিন শিশুর একজনের রক্তে সীসার মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে (µg/dL) ৫ মাইক্রোগ্রাম বা তার বেশি! এই হিসাবে প্রায় ৮০ কোটি শিশুর রক্তে এই পরিমাণ সীসা মিলেছে।

বিশ্বব্যাপী এই ধরনের প্রথম প্রতিবেদনে এটি। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আনুমানিক ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি, যা ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে চতুর্থ অবস্থানে নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেছেন, ‘সীসার বিষক্রিয়া শিশুদের জীবনভর শিক্ষাগ্রহণে অসামর্থ্য করে তোলাসহ তাদের স্বাস্থ্য ও বিকাশের ওপর মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে বড় হওয়ার পর তাদের আয়ের সক্ষমতাও প্রভাবিত হয়।’

‘বিপজ্জনক ধাতব বর্জ্য ও সীসার দূষণ এবং এর কারণে শিশুদের ক্ষতিজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে কাজ করবে ইউনিসেফ।’

‘দ্য টক্সিক ট্রুথ: চিলড্রেন্স এক্সপোজার টু লিড পলিউশন আন্ডারমিন্স অ্যা জেনারেশন অব পটেনশিয়াল’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি শিশুদের সীসার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া বিষয়ক হেলথ মেট্রিক্স ইভাল্যুয়েশনের করা একটি বিশ্লেষণ এবং এটি এনভায়রনমেন্টাল হেলথ পারস্পেকটিভসে প্রকাশের জন্য অনুমোদিত একটি গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করা হয়।

বাংলাদেশে উন্মুক্ত বাতাসে এবং আবাসস্থলের কাছাকাছি এলাকায় ব্যবহৃত সীসা-এসিড ব্যাটারির অবৈধ পুনর্ব্যবহারকে সীসার সংস্পর্শে আসার একটি প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্যই উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স ইভাল্যুয়েশনের তথ্য অনুসারে, সীসার বিষক্রিয়াজনিত কারণে বিশ্বে যেসব দেশে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ এবং এদেশের জনসংখ্যার প্রত্যেকের রক্তে সীসার উপস্থিতির গড় হার ৬ দশমিক ৮৩ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার,যা সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বিশ্বে ১১তম।

এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশের মশলায় উচ্চ মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হলুদের মান নির্দেশক হিসেবে রঙ ও ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত লেড ক্রোমেট শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সমানভাবে রক্তে সীসার মাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

এক সমীক্ষা অনুসারে, কিছু পণ্যে সীসার উপস্থিতি জাতীয় সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বেশি পাওয়া গেছে!

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীসার ভূমিকাজনিত কারণে বাংলাদেশে আইকিউ হ্রাস পাওয়ায় অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয় তা দেশের জিডিপির ৫ দশমিক ৯ শতাংশের সমান। সীসার বিষক্রিয়া শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের সক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং জীবনে পাওয়া সুযোগগুলোর সর্বাধিক সুবিধা গ্রহণে তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সীসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন যা শিশুদের মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি করে। এটি বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে, কারণ এটি তাদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই এর ক্ষতি করে, যার ফলস্বরূপ তাদেরকে সারা জীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।

শৈশবে সীসার সংস্পর্শে আসার ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সীসাযুক্ত পাইপের ব্যবহারের ফলে পানিতে থাকা সীসা; সক্রিয় শিল্প থেকে আসা সীসা - যেমন খনি এবং ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারযোগ্যকরন; সীসাভিত্তিক রং ও রঞ্জক পদার্থ; সীসাযুক্ত গ্যাসোলিন, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যথেষ্ট মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে, তবে ঐতিহাসিকভাবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে; খাবারের ক্যানে সীসার ঝালাই এবং মশলা, কসমেটিকস, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, খেলনা এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে সীসার উপস্থিতি। যেসব বাবা-মায়ের পেশা সীসা নিয়ে কাজ করার সঙ্গে সম্পর্কিত তারা প্রায়ই তাদের পোশাক, চুল, হাত ও জুতার মাধ্যমে সীসামিশ্রতি ধূলা নিয়ে আসেন এবং এতে করে অজান্তেই তাদের শিশুরা বিষাক্ত এই উপাদানের সংস্পর্শে আসে।

প্রতিবেদনে পাঁচটি দেশের কেস স্টাডি রয়েছে যেখানে সীসা দূষণ এবং অন্যান্য বিষাক্ত ভারী ধাতব বর্জ্য শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এগুলো হচ্ছে– বাংলাদেশের কাঠগোরা; জর্জিয়ার তিবিলিসি; ঘানার অ্যাগবোগব্লোশি; ইন্দোনেশিয়ার পেসারিয়ান; এবং মেক্সিকোর মোরেলস স্টেট।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সরকার নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে সমন্বিত এবং সম্মিলিত পদ্ধতির ব্যবহার করে সীসা দূষণ এবং শিশুদের মধ্যে এর বিষক্রিয়াজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।

রক্তের সীসার মাত্রা পরীক্ষা জন্য সক্ষমতা গড়ে তোলাসহ পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদন তৈরির ব্যবস্থা।

নির্দিষ্ট কিছু সিরামিকস, রঙ, খেলনা ও মশলার মতো সীসাযুক্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং পণ্যের সংস্পর্শে শিশুদের আসা ঠেকানোসহ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসমূহ যাতে শিশুদের মাঝে সীসার বিষক্রিয়া শনাক্ত, পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত থাকে সেজন্য এগুলো শক্তিশালী করাসহ ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা; এবং শিশুদের সীসার সংস্পর্শে আসার নেতিবাচক প্রভাবসমূহ আরও ভালোভাবে সামাল দিতে তাদের জন্য বিস্তৃত শিক্ষা ও মানসিক আচরণগত থেরাপির ব্যবস্থা করা।

সীসার সংস্পর্শে আসার বিপদ এবং এর  উৎসসমূহ সম্পর্কে নিয়মিত গণশিক্ষামূলক প্রচার চালানো এবং বাবা-মা, স্কুল ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে সরাসরি আবেদন জানানোসহ জনসচেতনতা এবং আচরণ পরিবর্তন করা।

সীসা অ্যাসিড ব্যাটারি ও ই-বর্জ্য উৎপাদন ও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করার জন্য পরিবেশগত, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা মানদণ্ড গড়ে তোলা, বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ করা এবং ধাতু গলানোর কার্যক্রমের জন্য পরিবেশগত এবং বাতাসের মান বিষয়ক নিয়মকানুন কার্যকর করাসহ আইন ও নীতিমালা করা।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050220489501953