শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেননি। আমাদের সাথে বৈঠক করে বলেছিলেন ৮ নভেম্বরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেবেন কিন্তু তা না করে নতুন করে আন্দোলন শুরু করলেন। এর পেছনে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন উপমন্ত্রী। বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, তবে এই পরিস্থিতিতে এই অবস্থায় তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিতে পারে। কারণ তারা মন্ত্রীর সাথে মিটিং করে গিয়েও আবার আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা জানিয়েছিলেন ৮ তারিখের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দিবেন। কিন্তু কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলকে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দুই পক্ষ হয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে। উপাচার্যের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে। যদিও ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুস্পষ্টভাবে কোনও অভিযোগ দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নিজ বাসভবনে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেছেন। তারা ৮ নভেম্বরের মধ্যে সুস্পষ্ট অভিযোগ জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই কেন উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো তা আমার বোধগম্য নয়। এখানে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করে কোনো তৃতীয় পক্ষ কি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে কিনা সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা শিক্ষা উপমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছোঁড়েন সরকার আন্দোলনকারীদের ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নের কোনো সুস্পষ্ট জবাব দেননি শিক্ষা উপমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সবার আগে কর্তৃপক্ষ দেখবে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা প্রশাসনের দায়িত্ব। শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, ছাত্রলীগের পদধারী কেউ যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা করে থাকেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাহাঙ্গীরনগরের বিষয়ে সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা নেবেন কে এরকম প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের বিষয়ে সুস্পষ্ট অভিযোগ দিতে হবে। সুস্পষ্ট অভিযোগ দিলে অবশ্যই ইউজিসির মাধ্যমে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাই সন্দেহের ওপর ভিত্তি করা কোনো অভিযোগ তদন্ত করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সাড়ে ৩টার মধ্যে জাবির হল না ছাড়লে পুলিশের অ্যাকশন
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিকেল সাড়ে ৩ টার মধ্যে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।
এদিকে, আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা মানছেন না শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ছেলেদের আটটি হলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যাননি। রাতে ছাত্রীরাও হলের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে শিবির নাশকতা ঘটাতে পারে—এ আশঙ্কায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হলত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রলীগের হামলা ও হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বিকেল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে আটটার দিকে আন্দোলনকারী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল করে বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে যান। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ছাত্রীরা হলের ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রীদের বের হয়ে এসে আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। পরে এসব হলের ছাত্রীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। তবে বন্ধ ঘোষণার পর অনেক ছাত্রী আগেই হল ত্যাগ করেন। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের মিছিল থেকে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।