মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যের উপাসক। সৌন্দর্যের একটা আকর্ষণ সবার কাছেই আছে। শিশুরা সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড় পরিধান করতে চায়, যুবকেরা সুন্দর সুন্দর ছবি খুঁজে নেয়, বৃদ্ধরা বাড়ি-ঘর সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখনে, প্রকৌশলীরা সুন্দর সুন্দর ভবন নির্মাণ করে থাকনে। সম্রাট শাহ্জাহান প্রিয়তমা পত্নী মমতাজ বেগমকে চিরস্মরণীয় করার জন্যে সৌন্দর্যের প্রতীক পৃথিবীর অন্যতম আর্শ্চয তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। আসল কথাটা হলো, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হাতের লেখা সুন্দর করে লেখার চেষ্টা করে না। সে জন্যে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায় না। যদিও শিক্ষার্থীরা জানে, Good hand writing scores good marks.
হাতের লেখা খারাপ হলে পরীক্ষক খাতা পড়তে চান না। পরীক্ষকগণ নির্দিষ্ট সংখ্যক খাতা দৈনিক মূল্যায়ন করে থাকনে। তাই সহজে পড়তে না পারলে বিরক্ত হয়ে তীর্যক রেখা টেনে কম বা গড় নম্বর দিয়ে রাখেন। হয়ত বিষয়বস্তুটা ঠিকঠাকই লেখা হয়েছে, অথচ অসুন্দর হাতের লেখার জন্যে ছাত্ররা নম্বর হারাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ফেল করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
হাতের লেখা ভালো হলে পরীক্ষক খাতা হাতে পাওয়া মাত্রই পরীক্ষার্থী সম্বন্ধে একটা ধারণা করে নেন। লোকে বলে, First impression is the best impression and it lasts long. হাতের লেখার জন্যে প্রত্যেক প্রশ্নোত্তরে অর্ধ নম্বর বেশি করে পেলে প্র্রত্যেক বিষয়ে অন্তত ১০ নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এভাবে অধিক নম্বর পেলে সব বিষয়ে ৫০ থেকে ১০০ নম্বর অধিক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সি গ্রেডের ছাত্র বি গ্রেড, বি গ্রেডের ছাত্র এ গ্রেড পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তাহলে হাতের লেখা সুন্দর করার প্রয়োজনীয়তা বুঝা গেল?
হাতের লেখা সুন্দর করতে পারাটা নিজের এখতিয়ার। আয়নার সামনে বসে নিজের চেহারা কীভাবে সুন্দর দেখায় এই ধরনের চর্চা প্রায় সবাই করে থাকে। হাতের লেখা সুন্দর করার আগ্রহ থাকলে কিছুদিন চর্চা করার পর একদিন দেখা যাবে নিজের হাতের লেখা কতটা সুন্দর দেখায়। এক্ষেত্রে অন্যের লেখা কোন কোন বর্ণ বা শব্দ দেখতে ও লিখতে ভালো মনে হয় সেগুলো অনুকরণ করা বা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে লেখা সংগ্রহ করে যেটা ভালো দেখায় সেটাকে অনুকরণ করা। তখন নিজের মনে আনন্দের সঞ্চার হবে। সুন্দর হস্তাক্ষরের জন্যে অন্যের বাহবা পাওয়া যাবে। সব চাইতে বড় কথা, নিজেরও সম্পদ হলো, ভালো নম্বর পাওয়ার একটি উৎস মিলে গেল।
কালো বৌকে সুন্দর শাড়ি পরালে যেমন সুন্দর দেখায়, তেমনি নিজের লেখায় সারর্মম না থাকলেও সুন্দর লেখার আবরণী উহাকে ঢেকে রেখে পরীক্ষকের চোখে সুন্দর করে তুলবে। তাই বলছি সুন্দর লেখা ছাত্রদের জন্যে A good pass-post. অনেক সময় গল্প-গুজবে নষ্ট হয়, ওই সময়টুকুও যদি হাতের লেখা ভালো করতে ব্যয় করা যায় তাহলে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব। যে সব শিক্ষার্থী শিক্ষা ক্ষেত্রে কৃতিত্ব লাভ করেছে, দেখা গিয়েছে তাদের হাতের লেখা অত্যন্ত সুন্দর।
লেখক : পরিচালক (গবেষণা ও তথ্যায়ন), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)