সুশিক্ষার জন্য নিতে হবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম - দৈনিকশিক্ষা

সুশিক্ষার জন্য নিতে হবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম

মমতাজ লতিফ |

ভেবেছিলাম, আশা করেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু খালেদা-তারেক কৃত বহু অপরাধের মধ্যে কয়েকটিতে দণ্ডিত হওয়ার পর এদের নাশকতা ও ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতির মূলোৎপাটন হয়েছে। ভেবেছিলাম, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা, যারা উচ্চ শিক্ষিত, অনেকে মুক্তিযোদ্ধা, তারা হয় বিএনপি ত্যাগ করে নতুন একটি জাতীয়তাবাদী ধারার ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার লক্ষ্যে নতুন দল তৈরি করবে অথবা রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করবে। আরেকটি বিকল্প হচ্ছে, ড. বদরুদ্দোজার দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল গঠন করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনেতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে প্রধানত প্রধানমন্ত্রীর বুদ্ধিদীপ্ত মেধাবী দূরদৃষ্টিপূর্ণ সুফলদায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে।

এটা তো সর্বজনমান্য সত্য যে, ২০১০-এ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অধীনে মহাজোট সরকার নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতির কাছে প্রদত্ত নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের অসম্পন্ন কাজ। ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, দীর্ঘকাল ধরে যা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল, সেই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের প্রধান প্রধান অপরাধীকে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত করে জাতির বড় একটি কলঙ্ক মোচনের কাজ করেছে। সেই সঙ্গে জাতিকে প্রথম সুশাসন প্রতিষ্ঠার নজিরও উপহার দেয়। এর চেয়ে বড় সুশাসনের নজির আর কি হতে পারে? বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন, আশ্চর্য এই যে, ৭৩ থেকে ২০১০-এ দীর্ঘ ৩৭ বছর পর তাঁর কন্যার হাত দিয়ে আইনটি বাস্তবায়িত হয়! এভাবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তার জন্মের শত্রুদের প্রাপ্য দণ্ডে দণ্ডিত করে দেশের রাজনীতি থেকে একদল অপরাজনীতিক, হত্যাকারী-ধর্ষক, লুটেরাদের বাংলাদেশ বিরোধিতার রাজনীতির মূলোৎপাটনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হয়।

বর্তমানে এদের এবং জামায়াতের ‘৭১ থেকে আজ পর্যন্ত অর্জিত বিপুল অর্থ-সম্পদ-বিত্ত বাজেয়াপ্ত করার কাজটি বাকি আছে। বাকি আছে জামায়াতের দল হিসেবে যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজও। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের শত্রুমুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় ধাপ জামায়াতের পরীক্ষিত মিত্র, আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, মুক্তিযুদ্ধের শত্রু পাকিস্তান ও আইএসের নির্দেশে বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অব্যাহত অপরাজনীতির পরিচালক খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কয়েকটি অপরাধে দণ্ডিত হওয়া, যার কয়েকটি সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া, বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের প্রধান প্রশ্রয়দাতা খালেদা-নিজামী-তারেকের দণ্ডিত হওয়ার ফলে রাজনীতির মাঠ অন্তত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিরোধিতার খল রাজনীতিকদের হাত থেকে মুক্তি পেল জাতি। এদের অনুপস্থিতি মহাজোট সরকারকে জঙ্গি নির্মূলে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজসাধ্য করেছে, তা বলাই বাহুল্য।

প্রকৃত অর্থে, সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশের সুশাসনের সূচনা ঘটে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং মৌলবাদী জঙ্গি সন্ত্রাস দমন, বিচার এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ, তা কঠোর হস্তে বাস্তবায়ন এবং হিন্দু-সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। এবারের নতুন সরকারকে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, নদী-খাল-ভূমি দখলদারের বিরুদ্ধে এবং একই সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও নাশকতামূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে।

পাশাপাশি-সরকারকে তরুণ প্রজন্মের জন্য ভালো মানের শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান ও আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যা পরিণামে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।

সত্যি কথা বলতে, গুণগত মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম, শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরাই দেশকে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের শিক্ষার মান- এর সঙ্গে এ সরকার কোনোমতেই কমপ্রোমাইজ করতে পারে না। বরং সরকারকে এ লক্ষ্যে শীঘ্রই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে, যার কোনো বিকল্প নেই। নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম, সেই ‘ইয়েস উদ্দীন’ এর সব কাজের প্রতিবাদে। আমার পুরনো প্রস্তাবগুলো তাঁকে আবারও সংক্ষেপে জানাই।

শিক্ষায় গুণগত মান অর্জনের লক্ষ্যে প্রথমেই একটি বৈপ্লবিক ক্র্যাশ প্রোগ্রাম প্রণয়ন করতে হবে, যাতে শুধু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-শিক্ষক, তথ্য-প্রযুক্তিবিদ, তরুণ-তরুণী যারা শিক্ষাক্ষেত্রে নানারকম ধারণা নিয়ে সারাদেশে দরিদ্র, এতিম, স্কুলের বাইরে থাকা নানা কাজ করে নিজেদের ও পরিবারের ব্যয় মেটাতে পড়াশোনার সুযোগ পায় না, তাদের শিক্ষা, বস্ত্র, খাদ্য, বিনোদন দেয়ার হাজার রকমের ছোট ছোট কর্মসূচী পরিচালনা করছে, তাদের সঙ্গে নিয়ে দেশের সব রকম পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ একটি আন্দোলন শুরু করতে হবে। সরকারকে ‘জিরো টলারেন্স টু লো কোয়ালিটি এডুকেশন’ অথবা ‘নিরক্ষরতা ও মানহীন শিক্ষা হটাও’ নামের এক জাতীয় আন্দোলন শুরু করতে হবে। অর্থাৎ এ আন্দোলনের মাধ্যমে জাতির মর্মমূলকে নাড়া দিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব পেশাজীবী এ আন্দোলনে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখবে। এ আন্দোলনের দুটো লক্ষ্য হবে ১) ক্লাস ফোর থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ২) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ। এদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের বাছাইকৃত পাঠের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে প্রধান কাজ। ধরা যাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নের ছাত্র-ছাত্রীরা ২৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলকে ‘এডপ্ট’ করবে, যাদের বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান বিষয়ের কঠিন পাঠগুলোর ওপর পাঠদান করবে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075409412384033