সৃজনশীল পদ্ধতি সব শিক্ষক এখনো রপ্ত করতে পারেননি - দৈনিকশিক্ষা

সৃজনশীল পদ্ধতি সব শিক্ষক এখনো রপ্ত করতে পারেননি

মোশতাক আহমেদ |

সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি চালুর এক দশক পরও দেশের প্রায় ৪২ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এখনো সঠিকভাবে এই পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারেন না। তাঁরা বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন বা অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়ন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রতিবেদনেই এ তথ্য উঠে এসেছে।

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের মূল্যায়ন হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যার বদলে শিক্ষার্থীরা বুঝে পড়বে ও শিখবে—এমন স্বপ্ন থেকে এক দশক আগে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে নোট-গাইড বা অনুশীলন বই থাকবে না, কোচিং সেন্টার ও গৃহশিক্ষকদের দৌরাত্ম্যও বন্ধ হবে—এমন আশার বাণী শোনানো হয়েছিল। কিন্তু এক দশক পর এখন দেখা যাচ্ছে, এই পদ্ধতি শিক্ষায় নানামুখী সমস্যা তৈরি করছে। যেখানে শিক্ষকেরাই এই পদ্ধতি ভালোভাবে রপ্ত করতে পারছেন না, সেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা তো হবেই।

যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আমিরুল আলম খান বলেন, কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নকেই সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা একধরনের ধোঁকাবাজি; বরং এখন শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবইয়ের বদলে গাইড বা অনুশীলন বই স্থান করে নিয়েছে।

মাউশি গত বছরের জুলাই মাসে দেশের ১৮ হাজার ৫৯৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮ হাজার ২১৯টি বিদ্যালয় তদারক (সুপারভিশন) করে প্রতিবেদন তৈরি করে। তাতে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত ৫৮ দশমিক ১২ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন। বাকি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আংশিকভাবে এই প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন। তাঁরা অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় সৃজনশীলের প্রশ্ন করেন। আর ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাইরে (মূলত গাইড বা শিক্ষক সমিতির করা প্রশ্ন) থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন।

মাউশির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই পদ্ধতিতে কম (৩০.৭৬%) প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি (৮০.৩১%) প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করার দিক দিয়েও এগিয়ে বরিশাল অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো। ওই এলাকার ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বাইরে থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন। বাইরে থেকে সবচেয়ে কম প্রশ্ন সংগ্রহ করে খুলনা অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো। এই অঞ্চলের মাত্র ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বিদ্যালয় বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে থাকে। রংপুর অঞ্চলের ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে আংশিক প্রশ্ন করতে পারেন। তাঁরা অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় সৃজনশীলের প্রশ্ন তৈরি করে থাকেন।

এর আগে ২০১৬ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন (রেস) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গবেষণা চালায়। ওই গবেষণায় দেখা যায়, ১৩ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি একেবারেই বোঝেন না, ৪২ শতাংশ শিক্ষক অল্পবিস্তর বোঝেন। তবে ৪৫ শতাংশ বোঝেন। ওই গবেষণায় বলা হয়, ৪৭ শতাংশ শিক্ষক তাঁদের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত গাইড বইয়ের সহায়তা নেন।

বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী সোয়া চার কোটি। এই দুই স্তরে শিক্ষক আছেন প্রায় সাড়ে আট লাখ। ২০১২ সালে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন (সৃজনশীল) পদ্ধতি চালু হয়। আর ২০০৭ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন জারি হলেও ২০০৮ সালে মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়। শুরুতে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন চালুর তোড়জোড় চলে। এ নিয়ে অভিভাবকেরা আন্দোলনে নামেন। তখন কয়েকজন শিক্ষাবিদের পরামর্শে সৃজনশীল (ক্রিয়েটিভ) নাম দিয়ে মূলত কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপদ্ধতিই চালু করা হয়। এখন ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বর সৃজনশীলে প্রশ্ন এবং ৩০ নম্বর হয় বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন  বলেন, ২০১২ সালে প্রণীত বিদ্যমান শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম) চলতি বছর সংশোধন করা হবে। সেখানে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর বিনিয়োগ কর্মসূচির (সেসিপ) অধীনে সৃজনশীল শিক্ষার বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেসিপের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, মূল সমস্যা হলো শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নিলেও তাঁরা সেটা বিদ্যালয়ে ঠিকমতো চর্চা করেন না। অনেকে গাইড বই থেকে প্রশ্ন করেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা নিজে থেকে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন না করলে এবং শিক্ষার্থীদের দিয়ে চর্চা না করালে এ সমস্যা থাকবেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, বর্তমানে সেভাবে হচ্ছে না। সেসিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রধান প্রশিক্ষকদের (মাস্টার ট্রেইনার) ১২ দিন করে এবং মাঠপর্যায়ের শিক্ষকদের তিন দিন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা পর্যাপ্ত নয়।

সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর সময় এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিজ্ঞান লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষে সৃজনশীল শিক্ষার পরিবেশ নেই, এটা নিশ্চিত করতে হবে। পড়াশোনাটা হতে হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে। প্রশ্ন তৈরি করা হলো একেবারে শেষের ধাপ। শিক্ষার্থীরা শিখল একভাবে, কিন্তু প্রশ্ন পেল অন্যভাবে; তাহলে তো জটিলতা বাড়বে ছাড়া কমবে না।

সূত্র: প্রথম আলো

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.024826049804688