মুখস্থবিদ্যা পরিহার করে শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় যথাযথ অনুধাবন করে মেধা খাটিয়ে উত্তর লিখবে- এমন চিন্তা থেকেই মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি চালু হয়েছিল। অথচ ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসিতে চালু হওয়া নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষকদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। ৯ বছরেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে দক্ষ হতে পারেননি প্রায় অর্ধেক শিক্ষক। আর শিক্ষকদের এই অদক্ষতার কারণে শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শুক্রবার (২৯ মার্চ) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক শিক্ষক এখনো সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। গাইড বইগুলোতে যে নমুনা প্রশ্ন দেওয়া থাকে, কিংবা পাবলিক পরীক্ষায় যে প্রশ্নগুলো দেওয়া হয়, অধিকাংশ শিক্ষক শুধু তা অনুসরণ করে নাম পাল্টে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে উদ্দীপক মূল বিষয়। কিন্তু অনেক শিক্ষক ক্লাসে এই উদ্দীপক ভালোভাবে পড়াতেই পারেন না।
সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকরা কতটা দক্ষ হয়েছেন- তা নিয়ে নিয়মিত জরিপ পরিচালনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গতমাসে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাদেশে মাত্র ৬০ ভাগ শিক্ষক সৃজনশীলে প্রশ্ন করেন। ৪০ ভাগ শিক্ষক এখনো সৃজনশীলে প্রশ্ন করেন না বা করতে পারেন না। বরিশালে সৃজনশীলে প্রশ্ন করেন মাত্র ৩৪ শতাংশ। এ হার সিলেটে ৪৯ শতাংশ, রংপুরে ৪৬ শতাংশ। এই তিন বিভাগে অর্ধেকের বেশি শিক্ষক সৃজনশীলে প্রশ্ন করতে পারেন না। অর্থাত্ এরা বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করেন।
মাউশির সুপারিশে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হলে বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। নিজেরাই যাতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারে- সে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সৃজনশীল নিয়ে শিক্ষকদের এই অদক্ষতার বিষয়ে শিক্ষা বিভাগ কতটা ভাবছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ যা বলছে:সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষকরা যাতে দক্ষ হতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। শিক্ষকরা এ বিষয়ে দক্ষ না হওয়ার কারণ হিসাবে তারা শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলছেন, শিক্ষকদের একাডেমিক ভিত্তি শক্ত না হওয়ায় তারা এ বিষয়ে দক্ষ হতে পারছেন না। এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন যেসব শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন তারা ভালো করছেন এবং করবেন। আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিলেও বেশি লাভ হবে না।
২০০৭ সাল থেকে এই প্রকল্প থেকে সৃজনশীল পদ্ধতির ওপর এসএসসি ও দাখিল পর্যায়ে চার লাখ ছয় হাজার এবং এইচএসসি ও আলিম পর্যায়ে ৩৬ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এ প্রশিক্ষণের পেছনে সরকারের ব্যয় হয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা। প্রশিক্ষণ পাবার পরও শিক্ষকরা দক্ষ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এ বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রশিক্ষণ নিয়ে অভিযোগ শিক্ষকদের: শিক্ষকরা বলছেন, তারা সৃজনশীল বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাননি। সৃজনশীল পদ্ধতির জন্য যে প্রশিক্ষণ, তা যথেষ্ট নয়। যে সময় ধরে প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা, তা-ও হয় না। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নামকাওয়াস্তে। যারা প্রশিক্ষণ দেন, তাদের অনেকে নিজেরাই বিষয়টি বোঝেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নজরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, শুরুতেই আমরা এ পদ্ধতির সমালোচনা করেছিলাম। সরকার কথা শুনেনি। কিন্তু ৯ বছরেও শিক্ষকদের উন্নতি হচ্ছে না এটা ভাবার বিষয়। তিনি মনে করেন, আমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত।
এক শিক্ষাবিদের বক্তব্য: শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি যেভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি প্রশ্ন করেন, যেটা নোট বইয়ে থাকে সেটা সৃজনশীল হয় কীভাবে! সৃজনশীল প্রশ্ন কপিও হয় !