বরিশালের সরকারি হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায় জালিয়াতি করে দুই বছর বয়স কমিয়ে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছেন। পদে বহাল থাকার জন্য জন্মতারিখ সংশোধন করে নিজের বয়স দুই বছর কমিয়েছেন তিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্ত প্রতিবেদনে এসংক্রান্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত সোমবার তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন মহাপরিচালকের কাছে জমা দিয়েছে। চাকরিবিধি অনুসারে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করেছে তারা।
জানা যায়, তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, চাকরির মেয়াদ বাড়াতে সচীন কুমার রায় অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছেন। এর দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিক্ষকের ব্যক্তিগত তথ্যের (পিডিএস) ফাইল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যক্ষ সচীন কুমার রায় বলেন, ‘সব নিয়ম মেনেই বয়স সংশোধন করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সপ্তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৭ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সচীন কুমার রায়। তখনকার নথিতে সচীন কুমারের জন্মতারিখ ১৯৫৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। চাকরিতে যোগদানের ২৭ বছর পর ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি ও পদায়নের সময় তাঁর বয়স পরিবর্তন করে ১৯৬০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারি চাকরিতে এফিডেভিট (বয়স কমানোর দালিলিক প্রমাণ) গ্রহণযোগ্য নয়। সিভিল সার্ভিস রুলের বিধি-৯ অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা তাঁর বয়স সংশোধন করতে পারেন না।’
এসংক্রান্ত অভিযোগ উঠলে মাউশি ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ, মাউশির উপপরিচালক মেজবাহ উদ্দিন সরকার ও এইচআরএম ইউনিটের সহকারী পরিচালক আশেকুল হককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা অভিযুক্ত ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহণের পাশাপাশি সরেজমিন যশোর শিক্ষা বোর্ড ও বরিশালে তাঁর চাকরিস্থলগুলোতে এসে তদন্ত করেন।
মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। বয়স পরিবর্তনে এত দীর্ঘ সময় লাগার কোনো কারণ নেই।’