সেই ডিজি বিল্লাল হোসেন জঙ্গী আস্তানা গড়তে মদদ দিচ্ছেন! - দৈনিকশিক্ষা

সেই ডিজি বিল্লাল হোসেন জঙ্গী আস্তানা গড়তে মদদ দিচ্ছেন!

গাফফার খান চৌধুরী |

শুধু যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিয়াইয়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক নয়, দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তুলতে নানাভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের গোয়েন্দা শাখার সাবেক সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে শুরু করে অধিদফতরে জামায়াত সিন্ডিকেট গঠন করা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তাদের অপমান অপদস্থ থেকে শুরু করে কোনটিই বাদ রাখেননি তিনি। তার প্রত্যক্ষ মদদে মিরপুর শাহআলী ফাজিল কামিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত শিক্ষক জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দৈনিক জনকেন্ঠর অনুসন্ধানে  এ তথ্য উঠে এসেছে। 

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আফজাল হোসেনের কথামতো মাদ্রাসাটির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ করে রেখেছেন। মাদ্রাসাটির শিক্ষক আফজাল হোসেনের সরাসরি ছাত্র ও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এমদাদ নামে জেএমবির এক আত্মঘাতী জঙ্গী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্তে বেরিয়ে আসে শিক্ষক আফজাল হোসাইন ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের মদদ দেয়ার বিষয়টি। জামায়াতের রোকন আফজাল হোসাইন ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া শীর্ষ জঙ্গী নেতা বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোর দায়ে জামায়াত-শিবির মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম সাইফুল্লাহকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছিল। যদিও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন ও মিরপুর শাহআলী (রাহ) ফাজিল কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক আফজাল হোসাইন এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন সব কর্মকর্তাদের বের করে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ও বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে নিজ বোরাক টাওয়ারের কার্যালয়ে গোপন বৈঠক করেন।

এমন ঘটনার পর আবার আলোচনায় আসে বিল্লাল হোসেন। সারাদেশে এগারো হাজারের বেশি আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। সেইসব মাদ্রাসায় নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করার দায়িত্ব বিল্লাল হোসেনের। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন নানা অপকর্মের কারণে এখনও যুগ্মসচিব হিসেবেই রয়েছেন। তার ব্যাচের অধিকাংশই সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন। নানা বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িত থাকায় তার পদোন্নতি হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসায় নিয়োগবোর্ডে দুর্নীতিবাজদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেয়াসহ নানা অনিয়নে জড়িত বিল্লাল হোসেন।

নিয়মিত এমপিওর (বেতন-ভাতার সরকারী অংশ) চেক ছাড় করতে ঘুষ নেয়া তার নিত্য দিনের বিষয়। চাহিদা মোতাবেক টাকা ঘুষ না পেলেই তিনি নানা টাল বাহানা শুরু করেন। এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন মিরপুর শাহআলী কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক পরিচালিত হয়। আরবী বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসার যে কমিটিকে অনুমোদন দিবে, সেই কমিটির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ব্যাংক থেকে তুলতে পারবে। অথচ মাদ্রাসাটিতে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে মাদ্রাসার শিক্ষক জামায়াত নেতা আফজাল হোসেন ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও তার গঠিত জামায়াত সিন্ডিকেট। আফজাল হোসেন একবার নিজেই স্বেচ্ছায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে মাদ্রাসা কমিটি তাকে বরখাস্ত করে। একই দলের এবং ঘনিষ্ঠতার কারণে আফজাল হোসেনের কথামতো মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহআলী (রাহ) কামিল মাদ্রাসার বেতনভাতার সরকারী অংশ বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক ডিও লেটার দিলেও তা আমলে নেয়নি মহাপরিচালক।

আরবী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ইতোপূর্বে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একেএম সাইফুল্লাহর নাম সুস্পষ্টভাবে লিখে টাকা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তা আমলে নেয়নি। আর আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সারাদেশে হাজার হাজার মাদ্রাসা আছে। সব মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নাম জানা সম্ভব নয়। এ জন্য নিয়মানুযায়ী চিঠিতে অধ্যক্ষ অথবা ভারপ্রাপ্ত লেখা হয়। এমন চিঠির পর কোন মাদ্রাসার বেতনভাতাদি বন্ধ থাকা অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ বিষয়ে শাহআলী কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম সাইফুল্লাহ জনকন্ঠকে বলেন, উচ্চ আদালত স্পষ্টভাবে আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাদ্রাসাটির কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষ অথবা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে বেতন ভাতাদি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানেন না মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন। সে সব আদেশের থোরাই তোয়াক্কা করেন ডিজি। বেতনভাতাদি বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি উপরন্তু তাকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত পদ থেকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছেন ডিজি। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে হবেন তা নির্ভর করে কমিটি ও আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ওপর।

তিনি বলছেন, আফজাল হোসাইন ২০০২ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ বজলুর রহমানকে মারধর করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়ে নিজেই অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবির চক্র গড়ে তুলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছেন। ২০১০ সালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বরখাস্ত হন। জেএমবি সদস্য এমদাদ নামের এক ছাত্র পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর আফজাল হোসাইনের সঙ্গে জঙ্গীদের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ ওঠে। তার সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদীদের যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি শিক্ষকতা পেশা থেকে আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে যথেষ্ট অসামঞ্জস্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফঁাঁসি হওয়া জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ক্যাশিয়ার ছিলেন। তামান্না পার্কের মালিক জামায়াত নেতা ঝিনাইদহের আব্দুল্লাহ আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর এবং সর্বশেষ গত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যাপক হাঙ্গামা করেন তিনি। ওই সময় তাকে বেধড়ক মারধর করে আফজাল হোসেন ও তার ক্যাডাররা। এসব ঘটনায় মিরপুর ও দারুস সালাম থানায় অন্তত ৪টি জিডি হয়েছে। এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান বলেন, অনেক অভিযোগ রয়েছে আফজাল হোসাইনের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত চলছে।

মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, আফজাল হোসাইনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত, জামায়াত-শিবির-জঙ্গীদের আশ্রয়প্রশয় দেয়া, জোরপূর্বক মাদ্রাসার কক্ষ দখল করে থাকাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জামায়াত নেতা হওয়ায় এই শিক্ষক ও ডিজি পরস্পর ঘনিষ্ঠ। ডিজির পরোক্ষ মদদে মাদ্রাসাটিতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটিও গড়ে তোলা হয়েছিল। দুই বছর আগে মিরপুর থানা পুলিশ মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে শিক্ষক আফজাল হোসাইনসহ তার কয়েকজন জঙ্গী ছাত্রকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আফজাল হোসাইন স্থানীয় একজন প্রভাবশালী মহিলা এমপির মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যায়।

এমন ঘটনার পর পরবর্তীতে আফজাল হোসাইন মাদ্রাসাটিতে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাজানোর দায়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কে এম সাইফুল্লাহকে নিজে জঙ্গীদের নিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। ওই শিক্ষকের সারা গায়ে এখনও সেই ধারাল অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

জানা গেছে, আফজাল হোসাইন ১৯৯৫ সালে যাত্রাবাড়ির তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। অদ্যাবধি তিনি কোন আসল সার্টিফিকেট মাদ্রাসায় জমা দেননি। এমনকি কোন প্রকার বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে তিনি মাদ্রাসাটিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েও মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি চাকরি নেন। অথচ কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে প্রভাষক হিসেবে ন্যূনতম ৬ বছরের অভিজ্ঞতা দরকার। তা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক হন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট হলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের বর্তমান জিডি তার হয়ে প্রভাব খাটান। উপরন্ত ঘুষ নিয়ে আফজাল হোসেনকে মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে দেন।

আরও জানা গেছে, জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনকে মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ না করা পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ডিজি নানা উছিলায় মাদ্রাসাটির শিক্ষক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে রেখেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি বেতন ভাতা ছাড় করানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিরপুরে একের পর এক জঙ্গী আস্তানা আবিষ্কৃত হলেও নেপথ্য কারণ জানা যাচ্ছিল না। বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় ২০১০ সালে। ওই সময় এমদাদ নামে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এক আত্মঘাতী সদস্য পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরে জানা যায়, এমদাদ শাহআলী বাগদাদী (রহ) কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। তাকে জঙ্গীবাদে দীক্ষা দিয়েছিল ওই মাদ্রাসারই তার সরাসরি আফজাল হোসাইন।

জানা গেছে, আফজাল হোসাইন জামায়াতের রোকন ছিলেন। পিতার নাম মুহম্মদ আজিজুল ইসলাম। বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন বেংগাড়ি গ্রামে। তিনি এলাকায় শীর্ষ জঙ্গী নেতা ফাঁসিতে মৃত্যু হওয়া বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আফজাল হোসাইনের সঙ্গে ২০১৫ সালে আবিষ্কৃত হওয়া শাহআলী মাজারের পেছনে জেএমবির আস্তানা থেকে গ্রেফতারকৃত সাতজন এবং ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর মাজার রোডের বর্ধমান বাড়িতে আবিষ্কৃত হওয়া জঙ্গী আস্তানায় নিহত ও গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের অনেকেই সঙ্গেই যোগাযোগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রটি বলছে, শাহআলী মাজারের পেছনের আস্তানায় তৈরি গ্রেনেড দিয়ে পুরনো ঢাকার তাজিয়া মিছিলে ও চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঈশা খাঁ ঘাঁটির মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আর বর্ধমান বাড়ির আস্তানায় নিহত শীর্ষ জঙ্গী ছিল আব্দুল্লাহ। আস্তানা থেকে বাড়ির মালিকের ছেলে বিমানের পাইলট সাব্বির গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে সাব্বির আদালতে জানায়, বিমান নিয়ে তার গণভবনে হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। আস্তানাটিতে যাতায়াত ছিল হলি আর্টিজান বেকারিকে হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর।

সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে আফজাল হোসাইন জনকন্ঠকে বলেন, এমদাদ তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আদরের ছাত্র ছিল। শুধু এমদাদ নয়, তার আরও তিন ভাইও তার ঘনিষ্ঠ ছাত্র ছিল। এমদাদদের পুরো পরিবার জঙ্গীবাদে জড়িত ছিল কী না তা তার জানা নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এমদাদরা চার ভাই জেএমবির সদস্য ছিল। নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা বলে  কাছে দাবি করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন।

এ দিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিষয়টি দ্রুত তদন্তের জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহম্মদ আলমগীরকে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা ও খুনের মামলার আসামির সঙ্গে ডিজির বৈঠকে রীতিমতো অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের মধ্যে। শিক্ষকরা অবিলম্বে মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের অপসারণ দাবি করেছেন। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের অঙ্গ সংগঠন স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। তিনি দেশের মাদ্রাসাগুলো এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরকে স্বাধীনতা বিরোধীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন। এই দফতরকে ঘিরে স্বাধীনতা বিরোধীরা ব্যাপক তৎপর। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রটির হাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মাদ্রাসার বহু শিক্ষককে নাজেহাল হতে হয়েছে। মহাপরিচালক নিজেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক শিক্ষককে অপদস্ত করেছেন। তারা ডিজির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাটিকে ছোট করে দেখলে সরকার ভুল করবে। এভাবে একজন যুদ্ধাপরাধীর আত্মীয় বহু অপকর্মে অভিযুক্ত জামায়াত নেতার সঙ্গে একজন সরকারী কর্মকর্তা বৈঠক করতে পারে না। মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার বলেছেন, এমন ঘটনা সত্যিই রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদারেসিনের মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমেদ মোমতাজীও এমন ঘটনায় রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন:  জামাত নেতা জাফরির সঙ্গে মহাপরিচালকের গোপন বৈঠক

             মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি পাঁচ শিক্ষক সংগঠনের

              টেন্ডার ছাড়াই কেনাকাটা, অধিদপ্তরেই ঘুমায় মহাপরিচালকের তিন ভাতিজা

           মহাপরিচালককের অপসারণ দাবি স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ। ২ জুন ২০১৮। 

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054500102996826