একান্ত প্রাসঙ্গিক কথা-
: ইতিহাস এক বিশ্বস্ত বন্ধু। এক সত্য দর্পদীন। সময়ের কাছে; মানুষের কাছে। ইতিহাস তো রচিত হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। আমার এ লেখা ইতিহাসনির্ভর। স্মৃতি রোমন্থনও বলা চলে। কবিতার ব্যকরণে ত্রুটি আছে। সবচাইতে বড় সত্যি- এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কারুকার্য। রুমা ইসলাম ১৪-১-৭৮
(প্রথমত:)
সেই সড়ক দিয়ে যেতে কখনও মনে
হয় কে যেন পিছু ডাকে আমায়,
মৃতপুরীর নিঃস্তব্ধতাকে খণ্ডন করে
মৃত আত্মার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
সহসা নিসর্গের জলছবির মতো বিবর্ণ,
স্মৃতির মিছিল এসে দাঁড়ায় জ্যামিতিক গতিতে:
আমি শুনতে পাই ২৬শে মার্চের সেই
ভাষণ : বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে : ওয়্যারলেস মেসেজ
হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু।
(দ্বিতীয়ত:)
ঝিলের সবুজ জলে যেন ছায়া পড়ে
জলছবির মতো : মুকুটহীন সম্রাটের
কালো পিচের রাস্তায় শীতের আড়ষ্টতায়,
কে যেন বলে ওঠে :
বিকেলে টিএসসিতে বিভাগীয়
নাটক আছে যাবি সবাই,
ডিপার্টমেন্টের সংবাদ কী?
সেমিনারে যাস তো?
আমি চিৎকার করে বলে উঠতে চাই :
সব ঠিক আছে কামাল ভাই,
শুধু তোমরা নেই দু'জনে - সমাজবিজ্ঞানে।
(তৃতীয়ত:)
তুমি আমাদের নিঃস্ব করে
গেছো খেলার মাঠে। কেউ আর বলে না
সমাজবিজ্ঞান, চ্যাম্পিয়ন।
দ্রুততম মহিলা ছিল আমাদের অন্যতম অহংকার।
বড় ব্যথিত হৃদয় ফিরে চলি সেই
সড়ক ধরে ইউক্যালিপটাসের পাতা কাঁপে থর থর:
উত্তরের বাতাসে সেও কথা বলে ওঠে
কথা নেই কারো সাথে।
মানুষই বিশ্বাসঘাতক প্রকৃতিই বিশ্বস্ত।
অতীত: বর্তমান: ভবিষ্যতের সাক্ষী হয়ে
আমি তো আছি।
(চতুর্থত:)
এই শীতে ফোটেনি চন্দ্রমল্লিকারা।
সূর্যমুখী বলে ওঠে: শিশু ছেলেটিকেও
রাখনি তোমরা। কবিতার মতো সুন্দর শিশু।
ফুল ও শিশুতে একই বৃন্তের দুটো ছবি।
মানব সভ্যতার কী এমন ক্ষতি হতো, সে থাকলে
৩২ নং সড়ক দিয়ে যেতে আমি নারাজ।
(পরিশেষে)
কান্নার প্রতিধ্বনি চত্বরে মূর্ছা যায়
আমি তো নারাজ সেই সড়কের দ্বিতল ভবনে
মৃত্যুর মিছিলে আমি যেতে নারাজ।
ঘাতকের নির্লজ্জ স্পর্ধায় আমি লজ্জিত শঙ্কিত
জনমানবহীন ঐ পোড়োবাড়িটিতে আমি যেতে নারাজ।
১৪ই জানুয়ারি ১৯৭৮
কবি পরিচিতি:
আক্তার জাহান রুমা (১৯৫২-১৯৮৪), কাব্যগ্রন্থ : নিরুদ্দেশের পথিক (প্রথম প্রকাশ-১৯৮৫)-এর অন্তর্ভুক্ত। কবি, শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও সুলতানা কামালের অনুজা প্রতীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। কবি’র বাবা ডা. সিরাজুল ইসলাম খুলনার সিভিল সার্জন হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর বাবা-মা’র চিকিৎসা করেছেন। স্বামী হুমায়ূন কবীর বালু স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ খুলনা’র যুগ্ম আহ্বায়ক, একুশে পদক ২০০৯-এ বিভূষিত। এ কবিতাটি ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু চর্চার নিদারূণ বৈরী পরিবেশে লিখিত।