বিতর্কিত ব্যক্তিকে কলেজ অধ্যক্ষ পদে বসানো ও লুটপাটে সহযোগিতা করার দায়ে পুরান ঢাকা সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদও বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজটির গভর্নিং বডি ভেঙ্গে নতুন গভর্নিং বডি গঠন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে জানাতে বলা হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে মঞ্চে ওঠা, অবৈধভাবে নিয়োগ, প্রায় দুই লাখ টাকা মাসিক বেতন-ভাতা গ্রহণ, লুটপাট ও ছাত্রীদেরকে দিয়ে মানবন্ধন ও মিছিল করাতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের বিতর্কিত অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর লিয়েন বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক হয়েও লিয়েনে অবৈধভাবে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদ বাগানোসহ কয়েকডজন অভিযোগ রয়েছে ইফতেকারের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের করা তদন্তের প্রতিবেদনে লিয়েনে অধ্যক্ষ পদে ইফতেকারকে নিয়োগ দিয়ে কলেজটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইফতেকার আলীর নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাকে প্রচলিত বিধান অনুযায়ী কলেজটিতে নিয়োগ দেয়া হয়নি। কলেজটিতে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা ‘টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের’ অভিযোগেটির সত্যতাও পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কর্মকর্তারা। বির্তকিত অধ্যক্ষকে নিয়োগ দিয়ে কলেজকে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি ভেঙ্গে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলেজের এক অনুষ্ঠানে ইফতেকার আলীকে না আসার মৌখিক নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী চলে যাওয়ার সাথে সাথে মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন ইফতেকার। এতে বিব্রত হন উপস্থিত অনেকেই। ইফতেকারের অনুগত কয়েকজন জামাতপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রীকে দিয়ে তার পক্ষে মিছিল করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ভয় দেখিয়ে ছাত্রীদেরকে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করানোরও অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ইফতেকারের পক্ষে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের দুইজন কর্তা ও কয়েকজন জামাতপন্থি শিক্ষক। ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীদেরকে উসকে দেন তারা। তবে, সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ইফতেকারকে ওএসডি ও সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে তার লিয়েন বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন বিতর্কিত অতিরিক্ত সচিব ইফতেকারের পক্ষে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ কর্মকর্তাই ইফতেকারে বিরুদ্ধে করা তদন্ত প্রতিবেদনটি ধামাচাপার চেষ্টা করেছেন বলে একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করেছে।