সেন্ট্রাল উইমেন্সের বিতর্কিত অধ্যক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া কতিপয় শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

সেন্ট্রাল উইমেন্সের বিতর্কিত অধ্যক্ষকে বাঁচাতে মরিয়া কতিপয় শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদ বাগানো ইফতেকার আলীকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন বিএনপি-জামাতপন্থী ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষক। এছাড়াও ৭০ বছর বয়স্ক একজন খণ্ডকালীন শিক্ষকও রয়েছেন এই সিন্ডিকেটে। এই চক্রটি কলেজের নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খোলা একটি পেইজ থেকে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে ছাত্রীদের উসকে দিচ্ছেন। উসকানিদাতা শিক্ষকরা বিএনপি ও জামাত শিবিরের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।। আজ বুধবার কলেজের কিছু ছাত্রীকে উসকে দিয়ে ইফতেকারের পক্ষে মিছিল করিয়েছেন। কলেজটির একাধিক শিক্ষক, ছাত্রী ও অভিভাবক  দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য জানিয়েছেন । 

ইফতেকারের পক্ষের কয়েকজন শিক্ষক কয়েকজন ছাত্রীকে দিয়ে মিছিল করানোর চেষ্টা করেন ।  অধ্যক্ষ কর্তৃক অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া কয়েকজন জামাতপন্থী শিক্ষকও ইফতেকারের পক্ষে হইচই করেন। গতরাতে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের নামে খোলা ফেসবুক পেইজ ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে ছাত্রীদের উসকে দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। আজ বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল তারা বিতর্কিত অধ্যক্ষের পক্ষে আন্দোলনের নামে ছাত্রীদের খোলা মাঠে বসিয়ে রেখেছে। 

জানা গেছে,  শফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম নামের তিন বিতর্কিত শিক্ষক কলেজে কর্মরত আছেন। তারাই বিতর্কিত অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীকে বাঁচাতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে। 

জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম ছাত্রজীবনে শিবির নেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচিত। অপরদিকে আমিরুল ইসলাম নোয়াখালী জেলার জামাত নেতা। আমিরুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।      

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কলেজের শহিদ মিনার ও ছাত্রী কমনরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিতর্কিত অধ্যক্ষকে তার চোখের সামনে না আসার নির্দেশ দেন। গতকালেই ইফতেকারের বিরুদ্ধে জমা হওয়া তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের। বিকেলে মন্ত্রী চলে আসার পরপরই ইফতেকারের অনুগত শিক্ষকরা তাকে রক্ষায় নানা ফন্দি আটেন। 

এর আগে সোমবার দৈনিক শিক্ষায় বিতর্কিত অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর নানা অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এটি মন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি কলেজের পূবনির্ধারিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েই অধ্যক্ষকে তার চোখের সামনে আসতে নিষেধ করেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক শিক্ষাকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, ইফতেকার আলী বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত পরিসংখ্যানের শিক্ষক। তিনি এর আগে ঢাকা কলেজে ছিলেন। তদবির করে লিয়েনে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ পদ বাগান তিনি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কোষাধ্যক্ষ পদে থেকে ব্যাপক লুটপাট করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।   

জানা গেছে, অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর নিয়োগ অবৈধ। তাকে বেসরকারি কলেজের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছাচারিভাবে কলেজে পরিচালনা করছেন। এছাড়া শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ এসেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অভিযোগে আরও বলা হয়, টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করেছেন অধ্যক্ষ ইফতেকার আলী।

   
 
এ প্রেক্ষিতে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে এসব অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর অভিযোগটি তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ইফতেকার আলীর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আশেকুল হক এবং সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বনমালী মোহন ভট্টাচার্য্যকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ অক্টোবর অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করেন এ কর্মকর্তারা। তদন্তের প্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তারা।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যক্ষ ইফতেকার আলীর নিয়োগ বিতর্কিত এবং তা প্রমাণিত হয়েছে। অধ্যক্ষ হিসেবে তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের উন্নয়নের স্বার্থেই সরকারি কলেজের একজন শিক্ষককে লিয়েনে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ইফতেকার আলীকে যে প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো তা ত্রুটিপূর্ণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাকে যে পরিমাণ বেতনভাতা প্রদান করা হচ্ছে তাতে কলেজে উপকৃত না হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। 
 
এছাড়া ইফতেকার আলীর বিরুদ্ধে ওঠা টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ গাইড বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তকরণের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ইফতেকার আলীর বিরুদ্ধে আসা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া অবৈধ উপার্জনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের হয়রানির প্রেক্ষিতে ইফতেকার আলীকে আর্থিক বিষয়াদি পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং সবল শিক্ষক কর্মচারীর সাথে সম-আচরণের বিষয়ে যত্নবান হতে হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। 

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.022603988647461