করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল চীনের উহান শহরের একটি হাসপাতালের নার্স নিং ঝু। কভিড-১৯ রোগাক্রান্তদের সেবা-শুশ্রূষায় দিন-রাত সমান করে খাটছিলেন। এরই মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি তার শরীরে এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এর পর থেকে তিনি ব্যক্তিগত কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তিনি সত্যিই এ রোগে আক্রান্ত কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ কারণে জাতির ক্রান্তিকালে তাকে অবরুদ্ধ থাকতে হচ্ছে। নিং ঝুর কথায়, তার হাসপাতালের অন্তত ১০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ব্যক্তিগত কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাদের কাজে ফেরা নির্ভর করছে নিউক্লিক এসিড টেস্টের ওপরে। এ ছাড়া হাসপাতালটির আরো ৩০ জনের সন্ধান মিলেছে, যারা কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন যেমন বিপন্ন হয়ে পড়েছে, তেমনি হাসপাতালের মাত্রাতিরিক্ত চাপ সামাল দেয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) গতকাল জানিয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এরই মধ্যে তাদের ছয়জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি মারা যান চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং, যিনি জনস্বার্থে এ ভাইরাস নিয়ে সতর্কবার্তা ছড়িয়ে প্রশাসনের রোষানলে পড়েন। তার মৃত্যুর পর দেশটিতে চরম জনরোষ দেখা দেয়। কভিড-১৯ আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৮৭.৫ শতাংশই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করতেন। এ কারণে অনেকেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ইভান হুং। তিনি বলেন, আসলে শুধু আইসোলেশন ওয়ার্ডে সেবার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন৯৫ মাস্ক, গগল্জ, ফেস শিল্ড ও সুরক্ষিত পোশাক পরাই যথেষ্ট নয়। বরং সাধারণ ওয়ার্ড, জরুরি ওয়ার্ড—সবখানেই নিজেকে সতর্ক রাখা উচিত, যাতে করে কভিড-১৯ আক্রান্তের কাছ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
এদিকে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এতে ১ হাজার ৪৮৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে চীন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬৫ হাজারের মতো। চীনের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের ২৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। করোনা ভাইরাসে চীনের বাইরে তিনজন মারা গেছে। তবে কয়েক হাজার ব্যক্তির মৃতদেহ চীন জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।