ক্যাসিনো-জুয়াবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া সেলিম প্রধানের পাঁচ শতাধিক কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। এই বিপুল সম্পদ থাকার কথা সেলিম প্রধান নিজেই স্বীকার করেছেন। তার পরও সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসছে তাঁর আরও বহু সম্পদের তথ্য। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংকগুলো, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সেলিম প্রধানের সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেই তথ্য সিআইডির হাতে আসেনি। রোববার (২০ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন ওমর ফারুক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর ধরা পড়া জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, সেলিম প্রধান, এনামুল হক এনু, রুপন ভুইয়া ও পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেফতারকৃতদের সম্পদের তথ্য চেয়েছে সিআইডি।
জি কে শামীমের সম্পদের তথ্য গত ১৫ অক্টোবর সিআইডির কাছে পাঠিয়েছে ১২টি সংস্থা। তাঁর সম্পদের ব্যাপ্তি এতটাই যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দুই হাজার ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়েছে সিআইডিতে। সিআইডি রাত-দিন কাজ করে চলেছে এই টেন্ডার মাফিয়ার সম্পদের হিসাব জানতে। তবে গতকাল পর্যন্ত পাঁচ দিনেও সব ডকুমেন্ট পড়ে তাঁর সম্পদের তালিকা করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মানি লন্ডারিং মামলাগুলোর তদন্তে অনেক গভীরে যেতে হয়। এ জন্য সময় লাগে। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও সিআইডির পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। গরমিল কোথায় কোথায় সেগুলো খুঁজে বের করা হবে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জি কে শামীমের সম্পদের তথ্য আমরা পেয়েছি। সেগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
সিআইডি সূত্র জানায়, অসুস্থ থাকায় সেলিম প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এক কর্মকর্তা জানান, সেলিমের ডায়বেটিসের সমস্যা আছে। সুগার কমে যায়। যে কারণে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। আবার হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেলিম প্রধান অসুস্থতার উল্লেখ করে বাড়তি সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
এক কর্মকর্তা জানান, সেলিম প্রধানকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম জানান, বাংলাদেশে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে তাঁর দুই শ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া জাপানে তাঁর তিনটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। থাইল্যান্ডে আছে হোটেল ব্যবসা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর ব্যবসা রয়েছে। তবে ঢাকায় তাঁর ক্যাসিনো, স্পাসহ নানা অবৈধ ব্যবসার বিষয়ে জানতে চাইলে চুপ করে থাকেন সেলিম। একপর্যায়ে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়ানোর চেষ্টা করেন। সেলিম সিআইডিকে জানান, ব্যবসার প্রয়োজনে তিনি জাপান, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে তিনটি বিয়ে করেছেন। তবে তাঁর মূল ব্যবসা জাপানকেন্দ্রিক।
ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে র্যাব। দুই দফা রিমান্ড শেষে সিআইডি গত শুক্রবার তাঁকে আদালতে পাঠালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সিআইডির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সেলিম প্রধানকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে।