উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মাত্র ২ বছরে সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এ বছর তাদের এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও তা পারছে না। দু’বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছিল ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। তাদের মধ্যে আজ শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১০ লাখ ১ হাজার ৭১৭ জন। সেই হিসাবে মোট বাদ পড়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৫ জন। এই বাদ পড়াটাকে শিক্ষা বিষয়ক এনজিওর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের মালিক রাশেদা কে চৌধুরীরা ঝরে পড়া হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। আর এই কথিত ঝরে পড়ারোধে তারা বিদেশ থেকে কোটি কোটি ডলার এনে লুটপাট করে থাকেন।
জানা যায়, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট অংশ নিচ্ছে ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ জন। বাকিরা অনিয়মিত ও মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী।
তবে, সোয়া চারলাখ শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষাং অংশ না নেয়াকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জিয়াউল হক ব্যাখ্যা করেন এইভাবে: মাধ্যমিকের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী যেটা কম সেটাকে ঝরে পড়া বলা ঠিক হবে না। এই স্তরে নানা বাস্তবতা কাজ করে। পরিসংখ্যান মেলালে দেখা যাবে, মাধ্যমিকে ছাত্রী বেশি পাস করেছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ছাত্র পরীক্ষার্থী বেশি। এর প্রধান কারণ অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আর যাদের বিয়ে হয়নি কিন্তু পাঠ বিরতি করেছে, তারা নিরাপত্তাসহ নানা সামাজিক কারণে কলেজে ভর্তি হয়নি। অভিভাবকরা এই বয়সের মেয়েকে দূরে পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আর যে সংখ্যক ছেলে কমেছে, তাদের অনেকেই হয়তো কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। তবে কারিগরি শিক্ষায় একটি অংশ ভিড়ে গেছে। তাদের হয়তো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পাওয়া যাবে। আবার কেউ কেউ টেস্ট পরীক্ষায় পাস করেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের এই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ জন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ১ হাজার ৭১৭ শেষ পর্যন্ত আজ পরীক্ষা দিচ্ছে। ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৫ জন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর লেখাপড়া ছেড়েছে। অপরদিকে, ২ বছর আগে যেহেতু মাধ্যমিক পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন এবং এরপর একাদশ শ্রেণিতে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫২ জন; সেই হিসাবে পাসের পরই হারিয়ে গেছে ৯১ হাজার ৯৭০ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কিছু কারিগরি শিক্ষার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলেও বাকিরা লেখাপড়ার পাট চুকিয়েছে মাধ্যমিক পাসের পরই।
এবার মোট ১৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাদরাসার আলিমে ৮৮ হাজার ৪৫১ জন এবং কারিগরিতে এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষার্থী ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪। মাদরাসা বোর্ডে দাখিল পরীক্ষার পর ২ বছর আগে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৫ জন নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৪৩ জন নিয়মিত হিসাবে এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আর কারিগরিতে একই ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫ জন নিবন্ধন করে এবার ৯৮ হাজার ৯২৪ জন নিয়মিত হিসেবে অংশ নিচ্ছে। এবার মোট অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ৩ লাখ ৩১ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ৩ হাজার ২৯০ জন। মান উন্নয়ন পরীক্ষার্থী ১৫ হাজার ২৯৬ জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জন অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬২২ জন, রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৫৪ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৫ হাজার ২০২, যশোর বোর্ডে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৯ হাজার ৬৬৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ৬৪ হাজার ৯১৯, সিলেট বোর্ডে ৭৬ হাজার ৬৯৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৭৯ জন পরীক্ষার্থী।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তরুণ কুমার সরকার বলেন, প্রথম দিন এইচএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, আলিমে কুরআন মাজিদ এবং এইচএসসি বিএমে বাংলা-২ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, যাতে প্রশ্নফাঁস না হয়, সে জন্য আজ থেকে ৫ সপ্তাহ সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৬ মে পর্যন্ত সারা দেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। এছাড়া প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে মোবাইল ব্যাংকিং কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। বিশেষ করে কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অঙ্কের টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে বিষয়টি থানায় জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীদের আগের মতোই ৩০ মিনিট আগে আবশ্যিকভাবে কেন্দ্রে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি করলে রেজিস্ট্রারে তার নাম, রোল নম্বর ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা পরীক্ষার দিনই কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবেন। কেন্দ্রে শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (কেন্দ্র সচিব) সাধারণ মানের একটি ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া আগের বিভিন্ন পরীক্ষার মতো এবারও পরীক্ষা শুরুর মাত্র ২৫ মিনিট আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সেটা জানানো হবে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র বণ্টনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে আসন বিন্যাস করে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।