আটকদের মুক্তি না দিলে কোটা আন্দোলন চলবে - দৈনিকশিক্ষা

আটকদের মুক্তি না দিলে কোটা আন্দোলন চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে গ্রেপ্তার করা শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি ও আহতদের চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। আটকদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া না হলে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এদিকে

গতকাল বিকেলে প্রেস ক্লাবের সামনে ‘অভিভাবক’ ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে সমাবেশ ডাকা হয়। পুলিশ ওই সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক খালি পায়ে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বানের পর তাঁকে অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর কোটা প্রথার সংস্কার চেয়ে করা আন্দোলনকারীদের আইনগত সহায়তা দিতে কাজ শুরু করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

‘কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন’ হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আন্দোলনের গতি প্রকৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন বলেন, ‘সরকার কোটা সংস্কারের বিষয়ে যে কমিটি গঠন করেছে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। তবে এই সিদ্ধান্তটি কয়েক দিন আগে নিলে সারা দেশে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। শত শত শিক্ষার্থী হামলার শিকার হতো না।’ তিনি বলেন, ‘যদি গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হয়, তাহলে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনায় বেঁধে দেওয়া সময় পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। তা না হলে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।’

এদিকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনসহ তিনজনকে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার পর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা হলেন তরিকুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম সুব্রত ঘোষ শুভ শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কোটা সংস্কারের আন্দোলন চলাকালে চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করার সময় গাড়ি পোড়ানোর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়।

প্রতিবাদকারী আটকের পর মুক্ত

গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘অভিভাবক’ ব্যানারে সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। সেখান থেকে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ব্লগার বাকী বিল্লাহকে পুলিশ আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যায়। অবশ্য এর ঘণ্টাখানেক পর তাঁকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাকী বিল্লাহকে পুলিশ ভ্যানে তোলার পর রেহনুমা আহমেদ ও ফাহমিদুল হকও ভ্যানে উঠে পড়েন। তবে পুলিশ তাঁদের রেখে শুধু বাকী বিল্লাহকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে অভিভাবকদের প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু আমরা প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখি তারা বামপন্থী লোকজন। তাদের আমরা বাধা দিইনি। তবে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ সেখানে বেশ ঝামেলা করছিলেন। তাঁকে থানায় আনার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

রাবিতে হামলাকারীদের বিচার দাবি, শিক্ষক অবরুদ্ধ

কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলামকে মারধর করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মারধরের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত খালি পায়ে প্রতিবাদ ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানায় তারা। এদিকে এই কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া শিক্ষককে কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে খালি পায়ে প্রতিবাদ ও জোহা চত্বরে এক ঘণ্টা অবস্থান করবেন বলে গতকাল সকালে ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ আমি নগ্নপদে অফিসে যাব। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জোহা স্যারের মাজারে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করব। খালি হাতে, নগ্নপায়ে এবং নীরবে যে কেউ যোগদান করতে পারেন। কোনো স্লোগান না, ফেস্টুন না, বক্তৃতা না, না কোনো রাজনীতি।’

এরপর গতকাল সকালে অফিসে এলে শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনকে তাঁর অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক কে বি এম মাহবুবুর রহমান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুত্ফর রহমান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। শিক্ষার্থীরা ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কে বি এম মাহবুবুর রহমান তাদের চলে যেতে বলেন।

কেন ফরিদ উদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে—জানতে চাইলে কে বি এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের সহকর্মী লাঞ্ছিত হোক। তাই বিভাগের সভাপতি হিসেবে আমি তাঁকে বাধা দিয়েছি।’ এ সময় শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন পাঁচ মিনিটের জন্য কর্মসূচিতে যাওয়ার অনুমতি চান। কিন্তু সভাপতি তাঁকে বাধা দেন।

তবে ফরিদ উদ্দিনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জোহা চত্বরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকিব, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক বায়তুল মোকাদ্দেছুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের অসংখ্য শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এ সময় তারা হামলার বিচার দাবি করে। পরে সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করে। এরপর প্রক্টর ও পুলিশ সংঘর্ষ এড়াতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়।

রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042388439178467