মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার তল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এসএম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের সীমানা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইটভাটাটির মালিক বিনোদপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খায়রুজ্জামান। স্কুল ও কলেজ চলাকালে ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়া, ধুলাবালি ও ইটবাহী যানবাহনের শব্দদূষণে পাঠদান ব্যাহত হয়। এ ছাড়া চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী।
মহম্মদপুর-মাগুরা সড়ক সংলগ্ন তল্লাবাড়িয়া এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের মাঠ সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইটভাটার যানবাহন চলাচল করে। এতে শব্দদূষণ ও ধুলাবালিতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটাটি চলছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন তল্লাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি দেখা যায়, ইটভাটায় অবৈধভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। প্রধান সড়কের গা ঘেঁষে বিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে রাখা হয়েছে বড় বড় গাছের গুঁড়ি। ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বিদ্যালয় এলাকা। এর মধ্যে ছেলেমেয়েদের নিরন্তর ছোটাছুটি ও ইটভাটার যানবাহন চলাচলে বিদ্যালয় এলাকার বাতাস বালুকাময় হয়ে ওঠে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ইটভাটার কারণে আগের বছরের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তু এ বছর মোট শিক্ষার্থী মাত্র ২১৮ জন। ধুলা এবং ধোঁয়ার কারণে অনেক সময় শিশু শিক্ষার্থীরা বমি করে ফেলে। অনেকে পাতলা পায়খানা বা পেটের পীড়ার কারণে নিয়মিত ক্লাসে আসতে পারে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনেই এসএম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ। এখানে মোট ২৭৫ জন শিক্ষার্থী। চিমনির কালো ধোঁয়া ও শব্দদূষণে এখানেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে আছে।
প্রধান সড়কের পাশে বিদ্যালয় ঘেঁষে ইটভাটা গড়ে উঠলেও নজর নেই প্রশাসনের। এ কারণে জনমনে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটার মালিক মো. খায়রুজ্জামান ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি বিনোদপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং বিএম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। এ কারণে তাকে কিছু বলার সাহস করেন না স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এসএম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ইটভাটার ধুলাবালি থেকে রক্ষা পেতে আমরা সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবিরুজ্জামান বলেন, আমরা আমাদের সমস্যা সম্পর্কে লিখিতভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি।
ইটভাটার মালিক ও বিনোদপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ইটভাটার জায়গাটি আমার। আমার কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে ইটভাটা পরিচালনা করেন আমিনুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তবে স্কুল ও কলেজের অসুবিধার কথা ভেবে আগামী বছর ওই জমিতে ইটভাটা করতে দেব না।
মহম্মদপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফুর রহমান বলেন, শিগগিরই এলাকাটি পরিদর্শন করে স্কুল ও কলেজের স্বার্থরক্ষা করা হবে।