বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত করে স্কুলের সহযোগিতার নামে চলছে গরুর হাট। প্রায় ৪ যুগেরও বেশি সময় ধরে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চলছে এ হাটের কার্যক্রম। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত কয়েক বছরের স্কুলটির জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে জিপিএ এর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায়।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও একটি মুনাফা-ভোগী চক্রের সমন্বয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না হাটটি। এটি জেলার সর্ববৃহৎ গরুর হাট বলে খ্যাত সেই সুবাদে জেলার এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও ব্যাপারীরা গরু নিয়ে আসেন এই হাটে। হাটের দিনকে কেন্দ্র করে প্রায় ২-৩ হাজার ছোট বড় পিকআপে (ছোট ট্রাক) প্রায় ৫ হাজর গরু-মহিষ যাতায়াত করা হয়। একেকটা গাড়ির পিছনে একেকটা গাড়ি সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় এতে করে রাস্তার এতটাই যায়গা আটকে যায় হেঁটে যাবার জায়গা থাকে না। এতে করে গ্রামের ছোট সরু রাস্তার অনেকটাই বন্ধ থাকে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা প্রয়োজন। খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরের সঠিক শারীরিক গঠন হয়। সে দিক থেকে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে সবসময় ভাসে, শিক্ষার্থীদের নাকে চেপে রাখতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়ে যায়। এছাড়া শিক্ষার মানের অবস্থা খুবই নাজুক। আমরা বেতন মওকুফ চাই না আমরা মানসম্মত পাঠদান ও শিশুদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার জন্য পরিচ্ছন্ন মাঠ চাই। হাট রবিবারে বসার কারণে রবিবার অর্ধেক স্কুল হয় দাবি কর্তৃপক্ষের এবং বৃহস্পতিবার অর্ধেক সময় স্কুল থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো হয় ফুল স্কুল। রোববার দিনটি নামে মাত্র হাফ স্কুল, ঐ দিন আসলে শিক্ষার্থীরা আসলেও কোন ক্লাস হয় না। অভিভাবকরা এর জন্য হাটের দিন ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠায় না। রোববার দিন হাট বসলেও সপ্তাহ জুরে থাকে রেস। সপ্তাহ জুরেই বিদ্যালয়ের মাঠ এবং পার্শ্ববর্তী রাস্তা গোবর আর কাদার মিশ্রণে একাকার হয়ে যায়। এগুলো উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস কক্ষ পর্যন্ত যেতে হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে অনীহা প্রকাশ করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা রশিদের মাধ্যমে হাসিলের টাকা উঠচ্ছে। দেখে মনে হয় এটা কোনো স্কুল নয় যেন হাটকে কেন্দ্র করে স্কুল ভবন নির্মাণ। হাটটিতে প্রতি সপ্তাহে কম করে হলেও সহস্রাধিক গরু মহিষ ক্রয় বিক্রয় হয়। প্রতিটি গরু–মহিষ থেকে হাট কর্তৃপক্ষ ২শ টাকা করে হাসিল উত্তোলন করেন। সে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা হাসিল উত্তোলন হয়।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, হাট একদিন হলেও পুরো সপ্তাহ জুরে থাকে গোবরের তীব্র গন্ধ। এছাড়া তাদের বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের অভাব রয়েছে। বিশাল খেলার মাঠ থাকলেও গরুর হাটের কারণে তা এখন খেলার অযোগ্য।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে গরুর হাট ঠিক নয় বিষয়টি আমরাও বুঝতে পারছি। স্কুলটির উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪ যুগ চলছে এ হাটটি। আমরা স্কুলের বাইরে একটি জায়গা খুঁজছি হাটের জন্য। আশা করছি ম্যানেজিং কমিটি আগামী ৬ মাসের মধ্যে হাটটি অন্য স্থানে সরিয়ে নিবে। এ সময় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. ইয়াকুব আলী ও মো. মজিবর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারাও প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার জানান, মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, একটি স্কুল মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান কোন বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়। আমি ৬ মাস পূর্বে স্কুলটি পরিদর্শন করে হাটটি বন্ধের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়ে এসেছি। হাটটি বন্ধ না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।