পটুয়াখালীর কলাপাড়ার টিয়াখালী কে আই ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসছে সাপ্তাহিক হাট। তাই বেলা একটার মধ্যেই ছুটি দিতে হচ্ছে দুইটি স্কুল। গত দেড় বছর ধরে দুইটি বিদ্যালয় মাঠে প্রতি বৃহস্পতিবার এই হাট বসার কারণে বিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কাযক্রম ব্যহত ও স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া একটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টিয়াখালী কে আই ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি ছুটি হয়ে গেছে। মাঠে কাঁচাবাজার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। এ স্কুল মাঠে গরু-ছাগল থেকে শুরু করে সব কিছুই বিক্রি হয়। তাই হাটের বিক্রেতাদের সুবিধার্থে দুটি বিদ্যালয়ই বেলা একটার পর ছুটি দিতে হচ্ছে।
হাটে কাঁচা মালামাল বিক্রি করতে আসা ফারুক হাওলাদার বলেন, তারা বেলা ১২টার দিকে মালামাল নিয়ে এসেছেন। দুপুর দুইটার পর বাজারে বিক্রি শুরু হয়। অপর ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস জানান, গত দেড় বছর ধরে তারা এই হাটে সব ধরণের মালামাল বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। টিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষই এ হাটের ক্রেতা। হাটে টোল ঘর না থাকায় বর্ষা মৌসুমে স্কুলের বাড়ান্দায় বসে তারা মালামাল বিক্রি করেন।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার মধ্যে তিনটি বিষয়ে ক্লাস শেষে স্কুল ছুটি দিয়ে দেন। গ্রামবাসীর সুবিধার্থে তারা শিক্ষার্থীদের ছুটি দিচ্ছেন বলে জানান। তবে গত বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) বেলা সোয়া একটায় গিয়ে দেখা স্কুল বন্ধ দেখা যায় এ প্রশ্ন করলে তিঁনি বলেন ওইদিন একটু আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে।
টিয়াখালী কে আই ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. শওকত হোসেন সেলিম বলেন, মূল হাটটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা স্কুল মাঠে হাট বসিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হলেও গ্রামবাসীর সুবিধার্থে তারা হাটের দিন একটু আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেন। তবে বর্ষা মৌসুমে স্কুলের বাড়ান্দায়ও দোকানীরা মালামাল বিক্রির জন্য বসে পড়ে। তখন সমস্যা হয়।
দুটি বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল মাঠে হাট বসার কারণে সারা মাঠ জুড়ে গরু-ছাগলের মলমূত্র ও ময়লার স্তুপ জমে থাকে। এ কারণে শনিবার স্কুলে এসে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে তাদের স্কুল পরিষ্কার করতে হচ্ছে।
একাধিক অভিভাবক জানান, স্কুল মাঠে হাট বসায় তাদের কেনাকাটায় সুবিধা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে হাট বসানো ঠিক না। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয়। হাটের ময়লা আবর্জনার কারণে রোগব্যাধি হতে পারে। এ হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া উচিত।
কলাপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের টিয়াখালীর ইউনিয়নের এটিও রফিকুল ইসলাম আরিফ গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলাপাড়ায় বদলি হয়ে আসলেও গত নয় মাসেও টিয়াখালী কে আই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসরকারি স্কুল হওয়ায় ওই স্কুলে তার যাওয়া হয়নি। তবে স্কুল মাঠে সাপ্তাহিক হাট বসানো ঠিক না। বিষয়টি জেনে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাজার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মনিরুজ্জামান খান জানান, স্কুল মাঠে হাট বসার বিষয়টি অবগত নন। তিনি বিষয়টি জেনে হাটটি অন্যত্র সরানোর উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।