স্কুল সংস্কারের নামে হরিলুটে জড়িত শিক্ষা অফিসার-প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেট - দৈনিকশিক্ষা

স্কুল সংস্কারের নামে হরিলুটে জড়িত শিক্ষা অফিসার-প্রধান শিক্ষক সিন্ডিকেট

জি, এম ফারুক আলম, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি |

যশোরের মণিরামপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামত ও সংস্কার, স্লিপ, প্রাক-প্রাথমিক, রুটিন সংস্কারে সরকারি বরাদ্দকৃত প্রায় ৪ কোটি ২ লাখ টাকার কাজে নয় ছয়ে বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসের ৩ সহকারী শিক্ষা অফিসার ও কতিপয় প্রধান শিক্ষককের গড়ে উঠা সিন্ডিকেট। কমিশন বাণিজ্যের পরিকল্পনায় এ অসৎ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে।

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত বিপুল অর্থের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে নয় ছয় ও ভুয়া বিল ভাউচার জমা দিয়ে বিলের আবেদন নিয়ে দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে সংবাদ প্রকাশে তোড়পাড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষাডটকমে  'স্কুল মেরামতের নামে কোটি টাকার ভুয়া বিল!' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

আরও পড়ুন:  স্কুল মেরামতের নামে কোটি টাকার ভুয়া বিল!

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০) উপজেলার ২৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েককোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্লিপের বরাদ্দ বাবদ প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৫ টাকা, অস্থায়ী গৃহ নির্মানে শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ, মেরামত ও সংস্কারে ৫৯টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ২ লাখ টাকা করে ১ কোটি ১৮ লাখ, ক্ষুদ্র মেরামত ও সংস্কারে ১৭টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে দেড় লাখ টাকা করে ২৫ লাখ ৫০ হাজার, আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ৬টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ১ লাখ টাকা করে ৬ লাখ, এনবিপিএ (নিড বেজড প্লেয়িং  এক্সেসোরিস) কাজের ৬টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে দেড় লাখ টাকা করে ৯ লাখ, রুটিন সংস্কারে ২০২টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৪০ হাজার করে ৮০ লাখ ৮০ হাজার, প্রাক-প্রাথমিক ২৬৭টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ১০ হাজার করে ২৬ লাখ ৭০ হাজার, ওয়াশব্লকের ২৩টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ২০ হাজার করে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের কাজের নয় ছয়ের সুযোগ দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম, হায়দার আলী ও পলাশ কান্তি হালদার ও প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দাস, ওমর আলী, রতন রায়, বিধান সরকার, মনছুর আলীসহ কতিপয় শিক্ষকের নেতৃত্বে কমিশন বাণিজ্য সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব শিক্ষকদের দিয়ে বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়ের বাকি প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে কমিশন হাতিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা হয়। এসব শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে ব্যবসাসহ অকারণে অফিস পাড়ায় ঘুরঘুর করার অভিযোগ অনেক দিনের। এসব শিক্ষকদের দিয়ে ওই সহকারী শিক্ষা অফিসাররা অনৈতিক সুবিধা আদায়ের বিনিময়ে তাদের এ সুযোগ দিয়ে থাকেন বলেও প্রচার রয়েছে। 

শিক্ষার মান উন্নয়ন, তদরাকি করতে ২৫-৩০টি বিদ্যালয় নিয়ে ক্লাস্টার গঠিত, যার দায়িত্বে থাকেন একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার। খেদাপাড়া ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই ক্লাস্টারের দুই প্রধান শিক্ষক ওমর আলী ও রতন রায়কে দিয়ে যশোরের একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে স্লিপের টাকা দিয়ে প্রিন্টার মেশিন কেনার জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ।

একই ক্লাস্টারের প্রধান জালাল উদ্দীন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাহিদুল স্যার সভায় ওমর আলী ও রতন রায়ের মাধ্যমে ক্লাস্টারে অন্তর্ভূক্ত ২৯টি বিদ্যালয়ে প্রিন্টার মেশিন কেনার কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওমর আলী এ অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সভায় শিক্ষকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রিন্টার কেনার কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার না থাকায় অনেক স্কুল সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। পরে ১০টি বিদ্যালয়ে প্রিন্টার কেনার অর্ডার যশোরের একটি দোকানে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে একজন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভাল কাজ করেও সমস্যা। তাতে স্যারদের কথা শুনতে হয়।

প্রধান শিক্ষক রতন রায়ও এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি। 

সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার ক্লাস্টারে অন্তর্ভুক্ত বিদ্যালয়ে বরাদ্দের শতভাগ কাজ হয়েছে।

লাউড়ী ক্লাস্টার সংশ্লিষ্ট স্বপন কুমার দাস নামের এক প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশ কান্তি হালদারের কথা বলে কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের কাছে অর্থ দাবি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনি বাজেটে স্যারের জন্য টাকা রাখতে বলেছেন। অবশ্য প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করেননি। 

তবে সহকারী শিক্ষা অফিসার পলাশকান্তি হালদার এ ধরনের নির্দেশনা কাউকে দেননি বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেন। 

ঢাকুরিয়া ক্লাস্টারের দায়িত্বে সহকারী শিক্ষা অফিসার হায়দার আলীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ পাওয়া গেলেও তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রশ্নের জবাবে তা অস্বীকার করেন।

এসব বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেহেলী ফেরদৌস দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার কাছেও ওই তিন শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045540332794189