নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার আদর্শ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র আরাফাত রহমান সিয়াম হত্যা মামলার রায়ে আদালত তিন আসামিকে ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন ও ২০১ ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। এছাড়া রায়ে আদালত ৩ জনকে খালাস প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আনিসুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলো মেহেদী মন্ডল, আসলাম মিয়া ও হালিম মন্ডল। আর খালাসপ্রাপ্তরা হলো, ফারুক মন্ডল, তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডল ও বিপ্লব। রায় ঘোষণার সময় মেহেদী মন্ডল, হালিম মন্ডল, ফারুক মন্ডল, তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডল ও বিপ্লব উপস্থিত থাকলেও মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসলাম মিয়া অনুপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষনার পর চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহত সিয়ামের বাবা মোস্তফা মাদবর বলেন, আদালতের এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। বাদী পক্ষের আইনজীবী মোঃ সুলতানুজ্জামান বলেন, মামলার রায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। স্বাক্ষ্য প্রমাণ অনুযায়ী খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের ন্যূনতম ৭ বছর হলেও সাজা হওয়া উচিত ছিল। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।
উল্লেখ্য, ১৩ আগস্ট এই রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন আদালত রায় ঘোষণার তারিখ পরিবর্তন করে ৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন। নিহত শিশু সিয়াম ফতুল্লা মাসদাইর গুদারাঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মোস্তফা মাদবরের ছেলে। জানা যায়, কবুতর কেনার টাকা না দেওয়ায় ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আরাফাত হোসেন সিয়ামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে মেহেদী মন্ডল। হত্যাকাণ্ডের সময়ে ও পরে লাশ গুমে সহযোগিতা করে ঘাতক মেহেদী মন্ডলের বাবা ফারুক মন্ডল ও তার মা মেরিনা মন্ডল।
এরপর ২৩ নভেম্বর সিয়ামের বস্তাবন্দী লাশ মুন্সিগঞ্জের শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। সিয়াম মাসদাইর এলাকার মোস্তফা মাতবরের ছেলে। ওই হত্যা মামলার আসামিরা হলো মাসদাইর পাকাপুল এলাকার মেহেদী মন্ডল, তার বাবা ফারুক মন্ডল, মা মেরিনা মন্ডল, মাসদাইরের আরমান মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া আব্দুল মতিনের পুত্র ভ্যানচালক আসলাম, শ্রমিক হালিম ও বিপ্লব।
মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই সোহেল আলম। তিনি বদলীর পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন এসআই মোঃ আবুল বাশার। পরবর্তীতে তদন্তের পর ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ জনকে অভিযুক্ত করে এসআই গোলাম মোস্তফা আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। তিনি চার্জশীটে ২৯ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। যার মধ্যে ২২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। আসামিদের মধ্যে মেহেদী মন্ডল, হালিম ও বিপ্লব জেলহাজতে রয়েছে। আসামি আসলাম বিদেশে পালিয়ে গেছে। অপর দুই আসামি ফারুক মন্ডল ও তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডল জামিনে রয়েছে।