ফরিদপুরের তালমায় সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন হওয়া সেই আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের (১৪) পরিবারের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যা মামলার আসামীদের স্বজনেরা বাদি হয়ে পৃথকভাবে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এসব মামলা দায়ের করেছেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ৭ জুন নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অন্তরকে অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন করে সন্ত্রাসীরা।
নিহত অন্তরের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা অন্তর হত্যার বিচার চাই। কিন্তু এখন আমাদের বিরুদ্ধেই পাল্টা মামলা করেছে আসামীদের লোকেরা। আমরা এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচার চাই।
জানা গেছে, অন্তর হত্যা মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামী মাহবুব (৩২) জুবায়ের (২৮) ও রাসেল (২৫) বাদি হয়ে নিহত অন্তরের পরিবার ও স্বজনদের ২২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে। এ মামলায় বেআইনী জনবদ্ধ হয়ে ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, চাঁদা দাবি ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে অন্তরের স্বজনদের বিরুদ্ধে। ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্তর অপহরণ মামলায় অন্যতম আসামী খোকন মাতুব্বর (৩৫), আজাদ মাতুব্বর(৪০) ও তার পিতা বিলনালিয়া গ্রামের শেখ মোবারক (৬২) বাদি হয়ে নিহত অন্তরের পরিবার ও স্বজনদের ২৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে ৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। ডিআইও ওয়ানকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্তর অপহরণ মামলার আসামী পিপরুল গ্রামের রফিক (৩২), মাসুদ (২৫) ও তার বোন রুনা আক্তার বাদি হয়ে দায়েরকৃত অপর মামলায় অন্তরের পরিবার ও স্বজনদের ৩৫ জনকে আসামী। এ মামলায় বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, হত্যাচেষ্টা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত এ মামলার তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপর একটি মামলার বাদি হয়েছেন অন্তর অপহরণ মামলার আসামী ছলেমান বেপারী (২৮) ও তার ভাই রেজাউল মাতুব্বরের স্ত্রী রেখা বেগম (২৯)। ৩৪ জনকে আসামী করে রুজ্জুকৃত এ মামলায় ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাট, মারপিট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি তদন্তপূর্বক নগরকান্দা থানার পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুন সন্ত্রাসীরা অপহরণের পর নৃশংসভাবে খুন করে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র চর মানিকদি পাগলপাড়া গ্রামের গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে অন্তরকে। এরপর ফিল্মি ষ্টাইলে লাশ গুম ও মুক্তিপণ আদায় করে। এ ঘটনায় ১৬ জনকে আসামী করে প্রথমে একটি অপহরণ মামলা হয়। ২৬ জুন রাতে অন্তরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর ওই অপহরণ মামলা এখন হত্যা মামলা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এরকম একটি জঘন্য হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অন্তরের মৃতদেহ উদ্ধারের পর আসামীদের বাড়ি ভাংচুর করে এবং আসামীদের স্বজনদের কয়েকজনকে গণধোলাই দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে। এসব ঘটনাকে পুঁজি করেই এসব পাল্টা মামলার অবতারণা বলে জানায় নিহতের স্বজনেরা।