কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে স্কুলছাত্রী ধর্ষণে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি দলের স্থানীয় নেতা হওয়ার সুযোগে নির্যাতিত পরিবারের ওপর প্রভাব বিস্তার এবং ‘থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে’ এ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ফলে ঘটনার চার দিনেও থানায় মামলা হয়নি।
অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন রাজীবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের পাটাধোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পাটাধোয়াপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোয় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ মতে, তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী ওই স্কুলছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে গত শনিবার বিকেলে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন সাখাওয়াত হোসেন। এরপর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়াসহ ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়।
মেয়েটির পরিবার ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষ নিয়ে হারুন-অর-রশীদ নামে এক আওয়ামী লীগকর্মী ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দেনদরবার শুরু করেন। নির্যাতিত পরিবারকে অর্থের লোভ দেখিয়ে থানায় মামলা না করতে নিষেধ করেন। এমনকি পরিবারটি যাতে থানায় যেতে না পারে সে জন্য পাহারা বসান। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেয়ার জন্য তিনি উভয় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
নির্যাতিত শিশুটির বাবা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। থানায় মামলা করতে যামু দেইখ্যা আমরগ এলাকার হারুন-অর-রশীদ কয়, ‘মামলা কইরা কোনো ফল পাবা না। তার চেয়ে চুপ থাক, কিছু ট্যাহা নিয়া দেই।’ গেরামের মাইনসেও কয়, ওরা (অভিযুক্ত) সরকারি দল করে। তাগরে কথাই পুলিশ শুনবে। তারপর এক দিন থানা থিকা পুলিশ আইল, অভিযোগ নিয়া থানায় যাবার কইল। বাড়ি থিকা থানা দূরে। খেয়া পারাপার ও হেঁটে থানায় যেতে এক দুপুর পার হইয়া যায়। তা ছাড়া থানায় যাতে যাবার না পারি সে জন্য ওরা লোক সেট কইরা রাখছে। এ নিয়া বিপদের মদ্দে আছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনারা হারুন ভাইয়ের কাছে জানেন। তিনি ঘটনা মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন।’ এরপর ফোন বন্ধ করে দেন সাখাওয়াত। তবে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘না, আমি মীমাংসার কোনো উদ্যোগ নিইনি। শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা যায় না।’
ঘটনাস্থল পাটাধোয়াপাড়া এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ঢুষমারা থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে থানার ওসি মো. রুহানী বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমি নির্যাতিত পরিবারের বাড়িতে গিয়েছিলাম এবং তাদের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসতে বলেছি। আজ (গতকাল মঙ্গলবার) শিশুটির বাবা অভিযোগ দিয়ে গেছেন। তবে এখনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি।’