চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল খানের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিরোধ) আইনে মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। সোমবার মামলার আর্জির ওপর শুনানি শেষে আদালত উপপরিদর্শক হেলাল খানের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে সেটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছে। এই আর্জি থেকে সোর্সদের বাদ দিয়েছেন আদালত। শুধুমাত্র হেলাল খানের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, মহানগর হাকিম আদালতে বাদী রুবিনা আক্তারের দাখিল করা আর্জির ওপর শুনানি শেষে আদালত আসামি হেলাল খানের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেছেন। এই মামলাটি তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১৬ জুলাই রাতে ডবলমুরিং থানার বড় মসজিদ গলিতে তিনজন সোর্স নিয়ে অভিযানে যান সাদা পোষাকধারী ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক হেলাল খান। এসময় তিনি থানার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষককে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অভিযানে যাওয়ার বিষয়ে অবহিত করে যাননি। সেখানে গিয়ে অভিযানের নামে স্কুলছাত্র সালমান ইসলাম মারুফের মা-বোনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
ওই দিন দশম শ্রেণির ছাত্র মারুফের বাসায় যখন পুলিশের সোর্স উঁকি দিচ্ছিল, তখন মারুফ তা লক্ষ করে তাদের চোর সন্দেহে গালমন্দ করে। এর দুই দিন আগে মারুফের বাইসাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়েছিল বাসা থেকে। সেই কারণে মারুফ সোর্সকে চোর বলে সন্দেহ করেছিল। মারুফের সঙ্গে সোর্সের তর্ক ও সোর্সকে উত্তম মধ্যম দেয়ার মধ্যেই ঘটনাস্থলে সাদা পোশাকে হাজির হন হেলাল খান। তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিলে মারুফের মা-বোন ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এই ফাঁকে মারুফ ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়।
কিন্তু হেলাল খান উল্টো তাদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে টানাহেঁচড়ার মধ্যে মারুফের বোন মাথায় আঘাত পান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এই সময় ডবলমুরিং থানা পুলিশের অন্য একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারুফের মা-বোনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। এদিকে মারুফ মা-বোনকে পুলিশ নিয়ে গেছে এমন তথ্য জেনে রাতেই আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার পর ওই রাতে ডবলমুরিং এলাকায় ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়।
মারুফের মৃত্যুর পর ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে উপপরিদর্শক হেলাল খান ও তার তিন সোর্সের বিরুদ্ধে আর্জি দায়ের করেন মারুফের মা রুবিনা আক্তার। এই আর্জির ওপর শুনানি শেষে সোমবার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন আর্জিটিকে মামলার এজাহার হিসেবে গণ্য করে মামলাটি তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এবিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী রুখসানা আক্তার বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েই মারুফ মৃত্যুবরণ করেছে। বিষয়টি আদালতের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই কারণে আদালত তদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। সোর্সদের বিরুদ্ধেও মামলার আর্জি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোর্সরা পুলিশ সদস্য নন, একারণে আদালত তাদের বাদ দিয়েছে।
অবশ্য, ওই ঘটনার পরই নগর পুলিশের উদ্যোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হেলাল খানকে বরখাস্ত এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।