দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রয়োজনে নতুন রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে দুটি স্কুলের একমাত্র খেলার মাঠের বুক চিরে। এজন্য সেখানে মাটি কাটার ভেকু মেশিন যখন থাবা মেরে বসেছে তখন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মনে দানা বেঁধেছে এক ধরনের চাপা কষ্ট। এলাকার ছোট-বড় অসংখ্য খেলোয়াড় ও দুই স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী খেলার মাঠে দানবের মতো যন্ত্রের এফোঁড়-ওফোঁড় করা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কিন্তু তাদের এই কান্না কি পৌঁছবে কর্তৃপক্ষের কাছে?- এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
সাঁড়াগোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাঁড়াগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠে রেললাইন স্থাপনের জন্য এখন মাটি কাটার মহাযজ্ঞ চলছে। এই স্কুলমাঠের বুক চিরেই ঈশ্বরদী-পাকশী-রূপপুর রেললাইন নির্মিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, নতুন রেললাইন হোক সেটা এলাকাবাসী এবং এই মাঠে যারা প্রতিনিয়ত খেলাধুলা করেন তারাও চায়। তবে একমাত্র খেলার মাঠের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি-না তা ভেবে দেখারও অনুরোধ করেছেন তারা।
এই মাঠে প্রায়ই স্থানীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ার নাগরিকরা প্রীতিফুটবল ম্যাচ খেলতে আসে। বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্থানীয় খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে শত শত দর্শকেরও সমাগম ঘটে এই স্কুল মাঠে। গত শুক্রবার সকালে যখন খেলার প্রিয় মাঠটিতে মেশিনে মাটি কাটা শুরু হয়, তখন কেউ প্রতিবাদ না জানাতে পারলেও চাপা কষ্ট নিয়ে নীরবে এ দৃশ্য দেখে বাড়ি ফিরেছেন। শত বছরের পুরনো এই খেলার মাঠে আগের মতো ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলা আর হবে না- এই আশঙ্কা করে মাঠের নিয়মিত খেলোয়াড় খন্দকার তৌফিক আলম সোহেল বলেন, এই মাঠে খেলাধুলা করে এলাকার অসংখ্য ছেলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ভালো খেলোয়াড়ের তালিকায় নাম উঠিয়ে এলাকার সুনাম বয়ে এনেছে। সোহেল বলেন, আমি নিজেও এই মাঠে খেলাধুলার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি গত ২৫ বছর। এখন এই মাঠে আগের মতো হয়তো আর খেলা হবে না- এ কথা ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে। ক্রীড়া সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, স্থানীয়ভাবে এ মাঠই এলাকার ছেলেদের কাছে একমাত্র ভরসা। রূপপুর প্রকল্পের প্রয়োজনে এখানে নতুন রেললাইন বসবে, সেটি আনন্দের কথা। বিকল্প হিসেবে খেলার মাঠটি রক্ষা করতে পারলে ভালো হতো। সূর্য সংঘের সভাপতি ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক কমিশনার ফখরুল ইসলাম বলেন, এই মাঠে খেলাধুলা করে এলাকার ছেলেরা অসংখ্য ট্রফি জিতে এনেছে। এখন মাঠটি সংকুচিত হওয়ার কারণে আগামীতে এই মাঠের খেলাধুলাও সংকুচিত হয়ে যাবে।
খন্দকার সজীব, রূপম, রবিন, তুষার, চয়ন, ইমন, সবুজ, সজলসহ ২০-২৫ খেলোয়াড় গত শুক্রবার খেলার মাঠে এসে মন খারাপ করে জানায়, সবার ভালোবাসার প্রিয় এই মাঠের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। এই মাঠের বুক চিরে যন্ত্রের সাহায্যে মাটি কাটা দেখে আমরা এই কষ্ট কেউ চেপে রাখতে পারিনি।
রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে সাঁড়াগোপালপুরের এই স্কুলমাঠ হয়ে ২২ কিলোমিটার রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু বলেন, নিয়ম মেনেই কাজ দ্রুত এগোচ্ছে।
রূপপুর প্রকল্পের মতো বৃহৎ প্রকল্পের স্বার্থে স্থানীয় অনেক ছোট ছোট সমস্যা এলাকার মানুষও মেনে নিয়েছেন।