স্কুলে প্রক্সি শিক্ষকই ভরসা - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলে প্রক্সি শিক্ষকই ভরসা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আছে সুরক্ষিত ভবন, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ ও আসবাব। রয়েছে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী, সরকারের দেওয়া উপবৃত্তি সুবিধা ছাড়াও শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে বিনামূল্যে নাশতা। শিক্ষার্থীরা স্কুলেও আসে নিয়মিত। শুধু আসেন না শিক্ষক। ফলে যমুনা চরাঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে নদীতে সাঁতার কেটে এবং খেলাধুলা আর দৌড়ঝাঁপ শেষে বাড়ি ফিরে যায়। এতে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা। ইসলামপুর উপজেলার চরবরুল ও জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের এ অচলাবস্থা চলে আসছে বছরের পর বছর।

অভিযোগ রয়েছে, এসব স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক স্থায়ীভাবে থাকেন রাজধানী ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় স্বামীর কর্মস্থল কিংবা শ্বশুরবাড়ি। তাই এসব স্কুলে প্রক্সি শিক্ষকই ভরসা। অভিযোগ রয়েছে, স্কুল ফাঁকি দেওয়া এসব শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই নিয়মিত ভোগ করে যাচ্ছেন বেতন-ভাতাসহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। বিষয়টি এলাকায় ওপেন সিক্রেট। ঘটনা অবগত আছেন সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জেলা অফিস পর্যন্ত। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওইসব স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্কুলের শিক্ষকদের জন্যই চরাঞ্চলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরুতে পারছে না। ফলে প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে তারা। গত ২ ও ৪ মে সরেজমিনে গিয়ে কোনো শিক্ষক না পাওয়া ছাড়াও বিদ্যালয় দুটির বেহাল চিত্র পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আনোয়ার হোসেন মিন্টু।

১০নং চরবরুল স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ শতাধিক। কাগজে-কলমে শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন। এসব শিক্ষক স্কুলে যান মাসে-ছয় মাসে একদিন। শিক্ষকরা মিলে ৫ হাজার টাকা বেতনে রফিজল নামে পঞ্চম শ্রেণি পাস একজন প্রক্সি শিক্ষক রেখে দিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা রফিজলকে ছাড়া অন্য কোনো স্যার-ম্যাডামকে চেনে না বা তাদের নামও জানে না। এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী ও তার স্ত্রী শাহিদা ইয়াসমিন এই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। তারা থাকেন জামালপুর শহরের বোসপাড়া এলাকার একটি বাসায়। 

প্রক্সি শিক্ষক রফিজল জানান, ৬ মাস ধরে তাকে প্রক্সি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক রমজান আলী ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষকের নাম তিনি জানেন না। স্কুলের শিক্ষক হাজিরা খাতা প্রধান শিক্ষকের বাসায় থাকে। মাসের শেষ দিকে বেতন করার সময় তিনি ব্যাগে করে ওই খাতা নিয়ে আসেন। তার স্ত্রী শাহিদা আক্তার স্কুলে আসেন ৬ মাস বা বছরে এক থেকে দুইবার। প্রতিদিন শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করাতে তার একার পক্ষে সম্ভব হয় না।

সাবেক মেম্বার আব্দুল হাই অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা না আসায় তারা কিছুদিন আগে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। এদিকে স্কুল সংস্কার ও আসবাবের জন্য গত অর্থবছরের বরাদ্দ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে নামমাত্র চুনকাজ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক রমজান আলী ভুয়া কমিটি ও ভাউচার দিয়ে সমুদয় টাকা পকেটস্থ করেন। ছাত্রছাত্রীদের নামে বরাদ্দের উপবৃত্তির টাকার বেশিরভাগ নীরবেই রয়ে যাচ্ছে তার পকেটে। চরবরুল স্কুল গভর্নিং বডির সহসভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, শিক্ষক হাজির করতে ব্যর্থ হয়ে তার পরিবারের কয়েক ছাত্রকে অন্য স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন। 

জামালপুর জেলা পরিষদ সদস্য ওয়ারেছ আলী ও চরবরুল স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, যমুনার চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান বজায় রাখতে শিক্ষকদের নদী পারাপারের জন্য জেলা পরিষদ থেকে স্থায়ী নৌকা দেওয়া হয়েছে। এরপরও শিক্ষকরা স্কুলে না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

অপরদিকে, জিগাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় একই। এ স্কুলে কাগজে-কলমে শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। এখানেও ছাত্রছাত্রী রয়েছে ২ শতাধিক। সব শিক্ষক মিলে আব্দুল ও নাছিম নামের স্থানীয় দুই যুবককে প্রক্সি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক সপ্তাহে একদিন স্কুলে এসে সকল শিক্ষকের হাজিরা খাতা ঠিকঠাক করে ফিরে যান। এ স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল কুলছুম থাকেন শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়। জান্নাতুন নাহার থাকেন ময়মনসিংহ, সোমা আক্তার থাকেন জামালপুরে। স্কুলের প্রক্সি শিক্ষকরা জানান, এই ৩ শিক্ষক মাসে একদিন করে এসে বেতন নিয়ে যান। অসুস্থতার কারণে আড়াই বছর ধরে স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছেন এ স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছানোয়ার হোসেন এবং জারিয়াতুল জান্নাত রয়েছেন প্রশিক্ষণে। ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশিদ আলম বলেন, ২৫ এপ্রিল ছিল প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। সেইদিন তিনি চরবরুল ও জিগাতলা স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে একজন শিক্ষককেও উপস্থিত পাননি। এ ব্যাপারে তিনি সকল শিক্ষককে শোকজ করলেও এখনও কোনো জবাব পাননি। 

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আগে এতটা জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও আপনাদের কাছে ওই স্কুল দুটির চরম অব্যবস্থাপনার কথা শুনলাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, চরবরুল ও জিগাতলা স্কুলের শিক্ষকদের নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ার খবরটি ইতোমধ্যে আমার কানে এসেছে। ঈদের ছুটির পর স্কুল ফাঁকি দেওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0082049369812012