স্কুলে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য বই কেনা নিয়ে 'জালিয়াতি ও দুর্নীতি'র অভিযোগ তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য বই কেনা নিয়ে 'জালিয়াতি ও দুর্নীতি'র অভিযোগ তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশে 'মুজিববর্ষ' উপলক্ষে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য আটটি বই কিনেছে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ তালিকায় থাকা বইগুলোর মধ্যে তিনটি বই নিয়ে 'জালিয়াতি'র অভিযোগ উঠেছে বইগুলো প্রকাশনার সাথে জড়িত দুটি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে। খবর বিবিসির। 

অভিযোগ অনুযায়ী, গোপনে প্রকাশকের নাম পরিবর্তন করে নিজের নামে কপিরাইট করে নিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে জার্নি মাল্টিমিডিয়া ও স্বাধীকা পাবলিশার্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠান।

এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী নাজমুল হোসেন ও তার পরিবারের একজন সদস্য । নাজমুল  হোসেন পেশায় সাংবাদিক, কাজ করেন ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে।

তিনি বলছেন, তারা কোনো 'জালিয়াতি, দুর্নীতি বা অনিয়ম' করেননি এবং বইগুলোর বিপরীতে কোনো অর্থও তারা গ্রহণ করেননি।

যে তিনটি বই নিয়ে বিতর্ক তার একটি হলো 'বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা'। এর সম্পাদক অমিতাভ দেউরী অভিযোগ করেছেন যে তাকে না জানিয়ে করা বইয়ের পরবর্তী সংস্করণগুলোতে নাজমুল হোসেন কিছু পরিবর্তন এনেছেন ।

"মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বইটি আমি সম্পাদনা করলেও পরবর্তীতে আমাকে না জানিয়ে নাজমুল হোসেন নিজের নাম প্রধান গবেষক ও সমন্বয়ক -প্রকাশক হিসেবে তার স্ত্রীর নাম দিয়েছেন। এমনকি গোপনে বইয়ের কপিরাইটও তার নামে করিয়ে নিয়েছেন," বলছেন অমিতাভ দেউরী।

তিনি আজ ঢাকায় কপিরাইট অফিসে তিনি বইটির কপিরাইট বাতিলের আবেদন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক বলছেন, বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংসদীয় কমিটি।

"তদন্তের মাধ্যেমে সব পরিষ্কার হবে। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। দরকার হলে সব সংস্থা তদন্ত করুক," বলছিলেন তিনি।

অমিতাভ. দেউরী বলেছেন ,"বাংলাদেশের প্রকাশনা আইন অনুযায়ী বইয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা বা বিতর্ক হলে তার দায় লেখক বা সম্পাদকের ওপই বর্তায়। আমার অজান্তেই যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা দেখে আমি শঙ্কিত। ভেতরে ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে কি - না তার দায় কে নেবে?"

তবে নাজমুল হোসেন বলছেন, বইটি সম্পাদনা করতে তার প্রতিষ্ঠান থেকে অমিতাভ দেউরীকে নিয়োগ করা হয়েছিলো এবং চুক্তি অনুযায়ী তাকে অর্থও দেয়া হয়েছে।

"বইটির কপিরাইট আমাদের। পরে চুক্তি হয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সাথে এবং সে অনুযায়ী তারা ২৩ শতাংশ লভ্যাংশ পাবে," বলছেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলছেন, বইটি প্রকাশে তারা কোনো অর্থ ব্যয় করেননি। কিন্তু যারা করেছে তারা মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করায় নিয়ম অনুযায়ী লভ্যাংশ দেবে মন্ত্রণালয়কে।

অমিতাভ দেউরী বলছেন, "মন্ত্রণালয় ও নাজমুল হোসেনের অনুরোধে বইটি আমি করেছিলাম কারণ কপিরাইট অনুযায়ী বইটির মেধাসত্ত্ব আমার হবে। কিন্তু নাজমুল হোসেন পরবর্তী সংস্করণে নিজেকে প্রধান গবেষক উল্লেখ করে গোপনে কপিরাইট নিয়ে নেন।"

নাজমুল হোসেন বলছেন, "অমিতাভ দেউরীকে অর্থের বিনিময়ে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে টিম লিডার মেনেই কাজ করেছিলেন। এখন হীন স্বার্থে তিনি মেধাসত্ত্ব হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন।"

তবে অমিতাভ দেউরী বলছেন, তিনি কোনো অর্থ নেননি।

"যে টাকার কথা বলা হচ্ছে তা বইটির প্রি-পোডাকশন কস্ট। সেখানে আমারও বিনিয়োগ রয়েছে" ।

প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা বইটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এবং সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের লেখা ছাও শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারে থাকার সময়কাল নিয়ে লেখা '৩০৫৩ দিন' বইটি বাংলাদেশ কারা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করলেও বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য যে বই সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে সম্পাদক হিসেবে নাজমুল হোসেন ও প্রকাশক হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাজমুল  হোসেন বলছেন, দুটি বই-ই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্রয় হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সংশ্লেষ ছিলো না।

"৩০৫৩ দিন- বইটিরও আমি উদ্যোক্তা, পাণ্ডুলিপি আমাদের। কারা কর্তৃপক্ষকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে তাদের ২০% রয়্যালটি দিবো আমাদের ছাপানো, মুদ্রণ ও বিপণনের দায়িত্ব দেয়ার জন্য," বলছিলেন তিনি।

যদিও কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

এর বাইরে স্বাধীকা পাবলিশার্সে প্রকাশ করা 'অমর শেখ রাসেল' বইটি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে উঠলে তারা তদন্তের জন্য একটি উপকমিটি গঠন করেছে সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে।

শুরু থেকেই বিতর্ক
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেয়ার জন্য প্রায় দেড়শ কোটি টাকার বই কেনার পরিকল্পনা করেছিলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

তখন সিদ্ধান্ত ছিলো যে এক একজন লেখকের একটি করে বই ৬৫,০০০ কপি করে কিনে স্কুলে বিতরণ করা হবে।

কিন্তু তখন বই বা লেখকের যে তালিকা করা হয় তাতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন দেশের সুপরিচিত লেখক সাহিত্যিক ও প্রকাশকরা।

গত ২৪শে জুন ১৫ জন সুপরিচিত লেখক এক বিবৃতিতে বই ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

তারা বলেন, "..এই ধরণের অস্বচ্ছ কাজ সমর্থনযোগ্য নয়। বাংলাদেশের অনেক লেখক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই লিখেছেন। বই কেনার পূর্বেই এসব বই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আনা আবশ্যক।"

এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের মধ্যেই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়াই নাজমুল হোসেনের তিনটিসহ আটটি বই ক্রয়ের অর্ডার দেয়া হয় যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৯ কোটি টাকা।

এর মধ্যে শুধু নাজমুল হোসেনের বইয়ের মূল্যই দাঁড়াবে বিশ কোটি টাকারও বেশি।

তবে নাজমুল . হোসেন এ জন্য তার দিক থেকে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057389736175537