রাজশাহীর তানোরে জোর করে স্কুলের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিদ্দিকুর রহমান নামে জামায়াতের এক সাবেক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় উপজেলার তালন্দ ইউনিয়নের নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেয়ার কারণে ওই জামায়াত নেতা প্রধান শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. শওকাত আলী ১৫ জুলাই সিদ্দিককে স্কুলের জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত জায়গা ছাড়েননি তিনি। স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে পাকা দোকানঘর নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। ফলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরখানেক আগে তালন্দ ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান স্কুলের জায়গা দখল করে পাঁচটি দোকানঘর নির্মাণ করেন। এরপর একটি দোকানঘর নিজের জন্য রেখে বাকি চারটি ভাড়া দেন। চারটি দোকানের প্রতিটিতে মাসে দুই হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করেন তিনি। সুরাইয়া জামান আব্বাসী নামের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর অভিযোগ, স্কুলের দেয়ালের সঙ্গে দোকানঘর থাকায় আমরা কমনরুমে বসে থাকতে পারি না। প্রচণ্ড গরম লাগে। বাইরের আলো-বাতাস পাওয়া যায় না। স্কুল চলাকালীন দোকানঘরে বসে বখাটে ছেলেরা আড্ডা দেয়। এমনকি বিভিন্ন সময় বখাটেরা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। আমাদের দাবি, অচিরেই এসব দোকান অপসারণ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। অভিযোগের ব্যাপারে জামায়াত নেতা সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সিদ্দিকের ফোনটি রিসিভ করেন তার ছেলে রাজু আহমেদ। রাজু বলেন, আমার বাবা (সিদ্দিক) ফোন রেখে তালন্দ বাজারে গেছেন।
তবে তালন্দ কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত রাজু বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে স্কুলের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণের অভিযোগ সঠিক না। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আর আমার বাবা আগে জামায়াত করতেন। এখন তিনি নিষ্ক্রিয়। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে বর্তমানে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, সিদ্দিকুর রহমান আমার এবং স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা না বলেই জোর করে জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন। স্কুলের জায়গা উদ্ধারের জন্য ইউএনওকে অভিযোগ দেয়ার কারণে সিদ্দিক আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। স্কুলের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ইউএনও চৌধুরী গোলাম রাব্বি বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে যদি অভিযোগ দেয়া থাকে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।