স্কুলের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে অধ্যক্ষের বাড়ি - দৈনিকশিক্ষা

স্কুলের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে অধ্যক্ষের বাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুর্নীতির টাকায়  আলিশান বাড়ি,গাড়ি,দোকান,ফ্ল্যাট এবং নামে-বেনামে ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা জমিয়েছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর শহীদ জিয়া স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কিছু নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য কেনা হয়েছিল ইট, বালু, সিমেন্ট। তবে সেসব নিজের বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করেছেন অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেছে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস। সূত্র জানিয়েছে, অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। খুব শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

অভিযোগকারী কয়েকজন শিক্ষক  জানান, অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি কয়েকজন শিক্ষককের বেতন আটকে রেখেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের অভিযোগ করতে হয়েছে।

নিজের পদোন্নতি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিজেই সম্পন্ন করেছেন ফাতেমা রশিদ। বিভিন্ন সময় স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ, অস্তিত্বহীন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করা, স্কুলের তহবিলের টাকা দিয়ে নিজের ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনা এবং ছাত্রীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির টাকা আত্মসাৎ করাসহ মোট ১৩টি গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত শহীদ জিয়া স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

গত বছরের শেষ দিকে করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ফাতেমা রশিদ ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর মাসে স্কুল শাখায় ধর্ম বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এর এক বছরের মাথায় তিনি ইসলাম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। কিন্তু তার এই পদোন্নতিতে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই তিনি প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় ফাতেমা রশিদ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ অক্টোবর নিজেই অধ্যক্ষ পদের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। একই বছরের ২৪ নভেম্বর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যহতি নিয়ে ২৫ নভেম্বর অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অর্থাৎ, নিজের নিয়োগ প্রক্রিয়া তিনি নিজেই এককভাবে পরিচালনা করেন। এরপর অধ্যক্ষ পদের এমপিও করার জন্য আবেদনের কাগজপত্রের সঙ্গে সহকারী অধ্যাপক বুলবুল মির্জাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেখান। অথচ বুলবুল মির্জা একদিনের জন্যেও দায়িত্ব পাননি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একজন শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়া, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরের বেতনের সঙ্গে ওই শিক্ষকের বকেয়া বেতন হিসেবে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৮৬ টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ফাতেমা রশিদ অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের কোনও ক্লাস নেননি। অথচ প্রতি মাসে এ বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কলেজ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তার বদলে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার জন্য একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেন তিনি। ওই শিক্ষককে এ বাবদ ৮ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ ৫ লাখ টাকা দিয়ে কলেজের নামে একটি মাইক্রো কেনেন। গাড়িটির দাম ১৬ লাখ টাকা দেখিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়েছেন। এর কোনও ভাউচার বা ক্যাশ মেমো কলেজ ফাইলে জমা দেননি। অধ্যক্ষ হওয়ার পর কলেজের ছাত্রীদের কাছ থেকে একদিন গর হাজির থাকার কারণে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে জরিমানা নিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একইসঙ্গে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া বেতন ও সেশন ফি’র টাকা ফান্ডে জমা না দিয়ে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে আরও ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, স্কুলে নাছিমা নামের কোনও শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই অস্তিত্বহীন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। স্কুল ভবন সংলগ্ন চারটি দোকান নির্মাণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা কলেজ তহবিল থেকে উত্তোলন করলেও তার কোনও ভাউচার কলেজে জমা দেননি। স্কুলের ভবন নির্মাণের অবশিষ্ট ইট, বালু, রড, সিমেন্ট  যাত্রাবাড়ীর পূর্ব ধলপুরে নিজ বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করেন। এছাড়া অধ্যক্ষের রুমে এসি, টাইলস, হাই কমোড, বাথরুম, দামি পর্দা দিয়ে সজ্জিত করা হলেও শিক্ষার্থীরা বসে ভাঙা বেঞ্চে, বেশ কিছু রুমের দরজা ও জানালা নেই। সর্বশেষ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের স্কুল শিক্ষক, ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম শিক্ষা পদে প্রভাষক এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে চাকরি করে তিনি পূর্ব ধলপুরে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দয়াগঞ্জ ও বেইলী রোডে ফ্ল্যাট কিনেছেন, ট্রান্স সিলভা পরিবহনের শেয়ার নিয়েছেন, গুলিস্তান আন্ডারগ্রাউন্ডে কয়েকটি দোকান নিয়েছেন। ২৫ লাখ টাকা দামের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং নামে-বেনামে ব্যাংকে মোটা অংকের অর্থ রয়েছে তার। অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কিছু নথি সংযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগকারী কয়েকজন শিক্ষক  জানান, অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন। অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি কয়েকজন শিক্ষককের বেতন আটকে রেখেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের অভিযোগ করতে হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদকে সোমবার সন্ধ্যায় ফোন করে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর ব্যস্ত আছেন বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই স্কুলের কমিটির দায়িত্বে আছি গত প্রায় ১০ বছর ধরে। কখনও কোনও অনিয়ম দুর্নীতি হতে দেইনি। আমি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছেন তারা ষড়যন্ত্র করছেন।’

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে শহীদ জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়ম সম্প্রতি তদন্ত করেছেন ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা দুই দফায় প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখেছেন। শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, ‘তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’

ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘তদন্তকাজ শেষ,আমরা প্রতিবেদন তৈরি করছি। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।’

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013706922531128