মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে শিক্ষাক্রমে তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্কুল-কলেজপর্যায় থেকেই গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
এ ছাড়া উচ্চশিক্ষায় গণহত্যাবিষয়ক গবেষণায় ব্যাপক জোর দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের উদ্যোগে ‘জেনোসাইড অ্যান্ড ম্যাস ভায়োলেন্স’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’ এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘জেনোসাইড : বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’, ‘মেমোরি অব জেনোসাইড অ্যান্ড ভায়োলেন্স’ ও ‘স্টেট, সোসাইটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক তিনটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। তিন সেশনে মোট ১১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
‘জেনোসাইড : বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ প্রথম পর্বে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
এই পর্বে চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘মেমোরি অব জেনোসাইড অ্যান্ড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির, সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এই পর্বে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। ‘স্টেট সোসাইটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক শেষ পর্বে মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। এই পর্বে সমাজ তথা রাষ্ট্রের গণহত্যার নানাদিক নিয়ে মোট চারটি প্রবন্ধ পাঠ করা হয়। দেশ-বিদেশের ২০ জন শিক্ষক-গবেষক-আইনজ্ঞ-রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক সেশনগুলোতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন।
ড. কামাল হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে একাত্তর সালে যে পরিমাণ গণহত্যা হয়েছে তার সব তথ্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। এ জন্য গণহত্যা নিয়ে আরো বেশি গবেষণা করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের জন্য বুদ্ধিজীবীদের অবদান তুলে ধরতে হবে।
এক প্রবন্ধে ভারতের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের সাবেক অধ্যাপক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশিস নন্দী বলেন, শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, স্কুল-কলেজপর্যায় থেকেই শিক্ষর্থীদের বয়স উপযোগী করে এ বিষয়ে পাঠদান নির্ধারণ করতে হবে।
বিষয়গুলো জানা থাকলে তরুণরাই একদিন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করবে। তিনি বলেন, তাঁর দেখা সবচেয়ে নৃশংসতম গণহত্যাটি ১৯৭১ সালে ঘটেছে। এর দায়ে পাকিস্তানকেও একদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি এখনো নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধা আসছে। দেশের গবেষণা খাতকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে হবে, বিজ্ঞানভিত্তিক এক কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।