ছেলেকে চাকরি না দেওয়ায় ঢাকার ধামরাই উপজেলার আতুল্লার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে নিয়েছেন জমিদাতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলার ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদে নিয়োগ পরীক্ষা (মৌখিক) হয়েছে ৮ ও ৯ আগস্ট। এর আগে গত ৪ জুলাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগের বাছাই ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি। ৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদের বিপরীতে আবেদন করেছিল ২৬৮ জন। বাছাই শেষে ২৩৫ জন প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আতুল্লার চর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন, হানিফ আলী ও আইয়ুব হোসেন আবেদন করেন। মেধাতালিকার ক্রমানুসারে প্যানেলভিত্তিক ফল প্রকাশ করে গত ৬ সেপ্টেম্বর। মেধাতালিকায় হানিফ আলী প্রথম, দ্বিতীয় মোশারফ হোসেন ও তৃতীয় আইয়ুব আলীর নাম প্রকাশ পায়। এদিকে ছেলেকে চাকরি না দেওয়ায় মোশারফ হোসেনের বাবা আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে নেন। প্রায় ১০ বছর আগে বিদ্যালয়ের মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য তিনি ৩২ শতাংশ জমি দিয়েছেন।
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমি স্কুলে জমি দিয়েছিলাম। হয়তো কোনো এক সময় আমার ছেলে-মেয়েরা স্কুল থেকে সুযোগ-সুবিধা পাবে। আমার ছেলেকে চাকরি না দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে অন্যজনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তাই জমি আমি দখল করে নিয়েছি। এ জন্য কলাগাছ রোপণ করেছি। বাঁশের বেড়া দিয়ে দখল বুঝে নিয়েছি।’
এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তারেক আহম্মেদ বলেন, ‘আমজাদ হোসেন যে জমি স্কুলের মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য দিয়েছিলেন ওই জমির পরিবর্তে স্কুলের নামে দলিল করা ৩৩ শতাংশ জমি মৌখিকভাবে অন্য জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে। মাঠের জমি দখল করে নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা করতে বা অন্য অনুষ্ঠান করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ‘আমজাদ হোসেনের ছেলের চাকরি হলে তাঁর কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি স্কুলের নামে সাফকবলা দলিল করে নিতে পারতাম। এখন তাঁর ছেলের চাকরি হয়নি। তাই তাঁর জমি দখল করে নিয়েছেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ইন্টারভিউতে মোশারফ হোসেন বেশি নম্বর পেলেও ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে হানিফ আলীকে প্রথম বানিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মালঞ্চ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া কারো চাকরি হয়নি।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এভাবে হলে সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় দেখছি না। আমার বিদ্যালয়ে চাকরি নেওয়ার জন্য এইচএসসি পাস করা একটি ছেলেও ইন্টারভিউ দিয়েছিল। তার চাকরি হয়নি। হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পাস করা একটি ছেলের।’ একই অভিযোগ তোলেন ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম।
এদিকে দপ্তরি-কাম-প্রহরী পদে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা চাকরি দেওয়ার কথা বলে ন্যূনতম চার থেকে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে সারা ধামরাই সরব ছিল ‘টাকা দিলেই চাকরি’ গুজবে। এ সুযোগে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি, বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ন্যূনতম চার লাখ থেকে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এদিকে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ করা হলে যাদের চাকরি হয়নি তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। টাকা ফেরত পেতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলে, ‘বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত দেয়নি।’ তবে আবদুল আলীম নামের এক চাকরিপ্রত্যাশী পাঁচ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ আতুল্লার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জমি যদি আমজাদ হোসেনের নামে থাকে তাহলে তাঁর দখল করা ঠিক আছে। আর যদি স্কুলের মাঠ হিসেবে দালিলিক প্রমাণ থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্য ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি আবদুল গনি বলেন, ‘ঘুষের বিনিময়ে চাকরি নেওয়ার বিষয়ে অন্তত আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।’