দেশের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামে যে পাঠ্যপুস্তকটি পড়ানো হয়, তা ভিন্ন ভিন্ন লেখক দ্বারা প্রণিত। ফলে পাঠ্যবইটির কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ নয়। বইটিতে বাঙালি জাতি, দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়বস্তু বস্তুনিষ্ঠ ও ধারাবাহিক নয়। শিক্ষার্থীরা এ পাঠ্যবই থেকে স্বাধীনতার খণ্ডিত ও বিকৃত ইতিহাস জানছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের (এসএসআরসির) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে।
‘বাংলাদেশের সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর শিক্ষাক্রমে স্বাধীনতার ইতিহাস, বাঙালি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধগত উপাদানের প্রতিফলন : একটি তুলনামূলক সমীক্ষা’ শীর্ষক এ গবেষণাটি করেছেন শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সালমা জোহরা। গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় কর্মশালায় এ গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করা হয়। এসএসআরসি এ কর্মশালার আয়োজন করে। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জিয়াউল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান। গবেষণা পত্র উপস্থাপন পর্ব মডারেট করেন রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. পি সি সরকার।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, সমাজ জীবনের কোনো দৃষ্টান্ত, অভিজ্ঞতার কেসস্টাডি বা কোনো ডকুমেন্টারি শ্রেণি কার্যক্রমে প্রয়োগ করা হয় না। বেশিরভাগ শিক্ষক শ্রেণি কার্যক্রমে বিষয়গত জ্ঞানের প্রয়োগে শুধু বক্তৃতা ও আলোচনা পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন। তাই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকে বাঙালি সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যাপ্ত থাকলেও শ্রেণি কার্যক্রমে শিখনফল উপযোগী প্রয়োজনীয় উপকরণ ও উপস্থাপন দক্ষতার অভাবে শিক্ষার্থীর মাঝে স্বাধীনতার চেতনা জাগরণে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীর আবেগীয় বিকাশ অনেক ক্ষেত্রেই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা পরিমাপ না করে তাদের আবেগীয় দক্ষতা পরিমাপের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
গবেষক জানান, ৩০টি জেলা থেকে নমুনায়ন পদ্ধতিতে মোট ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সমীক্ষা কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়েছে। বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে এটি একটি গুণগত গবেষণা। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার কার্যক্রম (৮৬.৬৬%) পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শিক্ষক পাঠদানে শিখনফলভিত্তিক কোনো শিক্ষা উপকরণই ব্যবহার করেন না।
৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর অভিমত হলো, শিক্ষক শ্রেণিতে ঢুকে বই খুলে পড়ানো শুরু করেন। তুলনামূলকভাবে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষকগণের মধ্যে এ প্রবণতা অধিক। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে পেশাদারিত্বের অভাবের কারণে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট ধারণা ও ঘটনা প্রবাহ শৃঙ্খলিতভাবে পাঠ্যবইয়ে সন্নিবেশিত হয়নি। তাই শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়নে একদল পেশাদার শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ও পাঠ্যবই প্রণেতা তৈরি করার সুপারিশ করা হয়েছে সমীক্ষায়।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক