ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাকচর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। ডিএসসিসির নবগঠিত ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঢাকা ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকায় অবস্থিত এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের ভেতরের মাঠ খানাখন্দে ভরা। দেয়ালের চতুর্দিকে নালা ডোবা, ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে সব ড্রেন। এখানে পাওয়া গেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী অ্যাডিস মশার লার্ভা। ফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা ভুগছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে।
ঢাকা-৪ আসনের এই এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার দিকে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছোট-বড়-মাঝারি নানা ধরনের শিল্প-কারখানা। এসব কারখানার বর্জ্য ফেলার কিংবা অপসারণের কোনো ব্যবস্থা নেই। সব বর্জ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে সড়কে। শিল্প-কারখানার রড, বালু, কাঠ, ড্রাম ও কয়লাসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে প্রতিটি সড়ক ভর্তি। মহল্লার ভেতরের প্রতিটি সড়কই বেদখল। কারখানার মালামাল আনা-নেয়ায় ব্যবহৃত ট্রাক, লরি, ভ্যান সারি-সারি করে রাখা হয়েছে সড়কে। ৪০, ২০ ফুটের প্রতিটি রাস্তাতেই জনচলাচল বন্ধ। সারাক্ষণ ভারী যানবাহন যাতায়াতের কারণে প্রতিটি সড়কে দেখা দিয়েছে বড় বড় গর্ত। যত্রতত্র বালু আর মাটি স্তূপ করে রাখায় বাতাসে সেসব উড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্প-কারখানা থেকে সার্বক্ষণিক নির্গমিত কালো ধোঁয়া। ধুলা-বালু আর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পুরো এলাকা। যার কারণে এই এলাকায় ভর দুপুরে গেলেও মনে হবে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ।
শ্যামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, শিল্প-কারখানার বর্জ্য সারাক্ষণ ড্রেনে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু মালিকরা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করেন না। স্টিল, রোলিং মিল, কুটির শিল্প, ডাইং ফ্যাক্টরি মিলিয়ে এখানে ৬০-৬৫টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। স্টিল মিলের পাশে অ্যাডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, স্টিলমিলসহ এখানে অবস্থিত বিভিন্ন কারখানা এলাকার রাস্তা দখল করে সেখানে কারখানার বর্জ্য ও মালামাল স্তূপ করে রেখেছে। পোস্তগোলা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথের সড়কের বড় অংশই বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য দিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো কারখানার মালিক বিসিকের রাস্তায় শেড নির্মাণ করে মালামাল রেখেছে। বাকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এখানে একটি সড়কও মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত নেই। পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানে কোনো প্রশাসন রয়েছে।
এ বিষয়ে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক আকাশ কুমার ভৌমিক বলেন, ‘এলাকার এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। খানাখন্দকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে ইতোমধ্যে আমি নিজ উদ্যোগে একাধিক পাম্প বসিয়েছি। অ্যাডিশ মশা ধ্বংসে প্রতিদিনই নিজস্ব উদ্যোগে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির মেয়রের সাথে সহসাই আমরা বৈঠক করব। এ ছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছেও আমরা যাবো, তাদের বলব—পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে যেন দ্রুত স্থানীয় শিল্প-কারখানাগুলোকে তাগিদ দেয়া হয়, কারখানা স্থাপনে পরিবেশ অধিদপ্তর যেন ছাড়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন মোল্লা বলেন, শিল্প-কারখানাগুলোর বর্জ্যে পুরো এলাকা দূষিত। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে। এখানে যে কলোনি রয়েছে সেখানেও কারখানার অ্যাসিড পানিতে সয়লাব, যার কারণে প্রায়ই এলাকার মানুষের গায়ে ঘা দেখা দিচ্ছে। তিনি জানান, এলাকা পরিচ্ছন্ন করার জন্য স্থানীয় শিল্প মালিক সমিতি নিয়মিত চাঁদা তুললেও বাস্তবে পরিবেশ রক্ষায় কোনো কাজ হয় না।