হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীর ছড়াছড়ি, পরীক্ষার হলে নেই - Dainikshiksha

হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীর ছড়াছড়ি, পরীক্ষার হলে নেই

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) |

মোসা: হালিমা ও মোসা: কনিকা। কলাপাড়ার ছোট বালিয়াতলী দাখিল মাদরাসা থেকে এবছর জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। কিন্তু তারা দুজনই এখন গৃহবধু। জানুয়ারি মাসে মাদরাসার হাজিরা খাতায় তাদের নাম থাকলেও বিয়ের কারণে অষ্টম শ্রেণি পার না হতেই ঝরে গেছে এই দুই শিক্ষার্থী। এ মাদরাসায় জানুয়ারিতে ৫৫ জন ভর্তি হলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৪৭ জন। শিক্ষা বর্ষ না ঘুরতেই শুধু অষ্টম শ্রেণি থেকে ঝরে গেছে আট শিক্ষার্থী।

হাজী আবদুস সোবাহান সিকদার মডেল একাডেমিতে জানুয়ারি মাসে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি দেখানো হয়েছে ৮৮ শিক্ষার্থী। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৪ জন। শহর ঘেষা এ বিদ্যালয় থেকে ১১ মাসে এক শ্রেণি থেকেই ঝরে গেছে ৪৪ শিক্ষার্থী।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মাধ্যমিক ও মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার তথ্য অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে তথ্য। মাদরাসায় চেয়ে আরও ভয়াবহ অবস্থা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা, ভর্তি খাতায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি দেখিয়ে পাঠ্যবই ওঠানোর বাণিজ্য এবং বাল্যবিয়ে ও আর্থিক দৈন্যদশায় উপকূলের স্কুল-মাদরাসা থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ক্রমশ বাড়লেও তদারকি নেই শিক্ষা প্রশাসনের। এমনকি শিক্ষার্থী বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত নেয়া পাঠ্য কোথায় যায়, এ বিষয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই কখনও নেয়া হয় না কোন আইনানুগ ব্যবস্থা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফাতেমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ১২৫ জন ভর্তি হলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯৪ জন। এ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ঝরে গেছে ৩১ জন। ধুলাসার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জানুয়ারিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি শিক্ষার্থী ছিল ১৩০ জন। জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১০১ জন। এ বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে ২৯ জন। বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জানুয়ারি মাসে অষ্টম শ্রেণিতে ৮৪ জন ভর্তি দেখানো হলেও পরীক্ষায় অংশ নেয় ৫৮ জন। একইভাবে ডালবুগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৬ জন, মহিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২২ জন, পাঁচজুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৩জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বছর না ঘুরতেই। এভাবে কলাপাড়ার ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২টির হিসেবে শুধু অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণের আগেই ঝরে গেছে ৩২৮ শিক্ষার্থী। 

মাদরাসার অবস্থা একই। ঝরে পড়া ছাত্রীদের অধিকাংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাদের শিক্ষাজীবনই থেমে গেছে বলে জানালেন মাদরাসা শিক্ষকরা। তথ্যমতে, বানাতিপাড়া আলহাজ্ব আবদুল হালিম খান দাখিল মাদরাসায় জানুয়ারিতে ৪৫ জন ভর্তি হলেও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩৫ জন। এ মাদরাসা থেকে ঝরে গেছে ১০ জন। মোয়াজ্জেমপুর সিনিয়র মাদরাসায় জানুয়ারিতে ভর্তি ছিল ৮৪ জন। এখন জেডিসিতে পরীক্ষার শুরু পর্যন্ত নেই ১৮ জন। একইভাবে বছর না ঘুরতেই ইয়াকুব আলী তালুকদার সিনিয়র মাদরাসায় ৩০ জন। ইউসুফপুর বালিকা দাখিল মাদরাসায়  ২৫ জন। উমিদপুর দাখিল মাদরাসায়  ২২ জন। দৌলতপুর মাদ্রাসায় ২২ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। এভাবে ২৭টি মাদরাসার ২৫টিতে ঝরে গেছে ৩২৫জন। 

গ্রামাঞ্চলের স্কুল মাদরাসা থেকে ঝরে পড়ার হার বেশি হলেও ব্যতিক্রম শহরের স্কুল-মাদরাসার। কলাপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ বছর জানুয়ারিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় ২৫১ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয় ২৪৮ জন। 

শিক্ষা অফিস ও মাদরাসা-স্কুল ঘুরে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভর্তির হিসেব ৩৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ৩০৩৮ জন। জেএসসি পরীক্ষার আগেই ঝরে গেছে ৩২৮ জন। ক্যাজুয়াল মিলে সর্বোচ্চ পরীক্ষার্থী রয়েছে ২৭৯৯ জন। একইভাবে ভর্তির হিসেবে ২৭টি মাদরাসার অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ১৬৩৫ জন। পরীক্ষার আগেই নেই ৩২৫ জন। এভাবে মাদরাসা এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শেণি উত্তীর্ণের আগেই ঝরে গেছে ৬৫৩ শিক্ষার্থী।
ছোট বালিয়াতলী দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. ফয়েজ জানান, গ্রামাঞ্চলের মাদরাসা হওয়ায় এখনও অল্প বয়সে ছাত্রীদের বিয়ে দেয়ার প্রবণতা বেশি অভিভাবকদের মধ্যে। তার মাদরাসার দুই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে বিষয়টি তারা জানতেও পারেননি।

বানাতিপাড়া আলহাজ্ব আবদুল হালিম খান দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. জাফর খান জানান, নদীভাঙনকবলিত দরিদ্র এলাকা হওয়ায় অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা মাদরাসায় অনুপস্থিত।

বেতমোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মোতালেব সিকদার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, তার বিদ্যালয়ে ৫-৬ ছাত্রীর বিয়ের খবর তারা পেয়েছেন। বিয়ের পর থেকে তারাও অনুপস্থিত রয়েছে। জানুয়ারিতে ৮৪ জন ভর্তি হলেও জেএসসি পরীক্ষায় ৫৮ জন অংশ নেয়। ২৬ শিক্ষার্থী কিভাবে বছর শেষ হওয়ার আগেই ঝরে গেছে এ তথ্য জানতে চাইলে তাঁর ভাষ্য, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদেরই জানুয়ারিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি দেখানো হয়। কিন্তু পরীক্ষার পর অনেকে বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসায় ভর্তি হয়। এ কারণে জেএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে মাত্র ৫৮ জন। 

হাজী আবদুস সোবাহান সিকদার মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ওমর ফারুক জানান, জানুয়ারিতে ৮৮জনই ভর্তি ছিলো। কিন্তু দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে আর্থিক অনটনে কেউ শ্রম বিক্রিতে চলে গেছে। কারও বিয়ে হয়ে গেছে। এ কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪৪ জন। 

কলাপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, শহরের অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা লেখাপড়ায় আন্তরিক হওয়ায় শহরের স্কুল থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কম। ঝরে পড়ার হার কমাতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে অভিভাবকদের সচেতনমূলক সভা ও বাল্যবিয়ে এবং ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের কুফল সম্বন্ধে ধারণা দিলে গ্রামেও ঝরে পড়ার হার অনেকটা কমে আসবে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মনিরুজ্জামান খান দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, জেএসসি পরীক্ষার আগেই এতো শিক্ষার্থী ঝরে পড়া দুঃখজনক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তদন্ত করে শিক্ষার্থী ভর্তিতে কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

 

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল - dainik shiksha স্কুল-কলেজ, মাদরাসা খুলবে ২৮ এপ্রিল সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha সাত দিন বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিক বিদ্যালয় তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha তীব্র গরমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে : ড. আইনুন নিশাত কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha কারিগরির সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha মাদরাসায় ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046629905700684