দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সোশিওলজি বিভাগের লেভেল-২-এর সেমিস্টার-২-এর চূড়ান্ত পরীক্ষার দুটি কোর্সের ফলে সব শিক্ষার্থীর শতভাগ নম্বর পাওয়া নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ করে বলছেন, এটা বিশ্ব রেকর্ড। এ রেকর্ড গিনেস বুকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
সম্প্রতি সোশিওলজি বিভাগের সোশিওলজি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দুটি কোর্সের ফল প্রকাশ হয়। ফলাফলে দেখা যায়, সব পরীক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন। এমন ফল প্রকাশের পর ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
গতকাল ফলাফলের তালিকা সংগ্রহ করে দেখা যায়, সোশিওলজি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের পরীক্ষায় ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের প্রত্যেকেই ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ পেয়েছেন। ক্লাসে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেককেই পাঁচের মধ্যে পাঁচ দেয়া হয়েছে। মিডডে পরীক্ষায়ও সবাই ১০-এর মধ্যে ১০ পেয়েছেন। একই ঘটনা ঘটেছে ওই বিভাগের রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কোর্সেও। এ কোর্সে ১১৩ শিক্ষার্থীদের সবাই শতভাগ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন।
তবে ফলাফলের তালিকা যাচাই করে দেখা গেছে, রুরাল সোসাইটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্সের ১১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০৩ জনের স্টুডেন্ট কোড নম্বর নেই। অথচ তাঁদেরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে সোশিওলজি অনুষদের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, এমন ঘটনার কী প্রমাণ আছে। পরে ফলাফলের তালিকা সংরক্ষণে আছে জানালে তিনি আর কথা কলতে রাজি হননি। এরপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. ভবেন্দ্র কুমার বিশ্বাসের কাছে ফোন করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কথা বলা তাঁর দায়িত্ব নয়।
পরে সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিস অনুষদের ডিন ড. এ টি এম রেজাউল হক বলেন, ‘আমি ফলাফল শিট দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। তা ছাড়া যারা পরীক্ষা দেয়নি বা এখন আর শিক্ষার্থী নেই—তাদেরও ফলাফল এসেছে। এটা কপি-পেস্ট ফলাফল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফলাফলের কপি উপাচার্যকে দিয়েছি। তিনি এটা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, এই ফলাফল বিস্ময়কর। পরীক্ষার্থীরা নকল করে লিখলেও ফলাফল এমন হতে পারে না। কাট-পেস্ট করে এ ফলাফলের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই ফলাফলের জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো ফজলুল হক বলেন, ‘আমি ফলাফল দেখে অবাক হয়েছি। সারা বিশ্বের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেয়েছে—এ রকম কোনো উদাহরণ আমি আগে দেখিনি বা শুনিনি। এ রকম হলে তো শিক্ষাব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
তবে পরীক্ষক সহকারী অধ্যাপক সাবরিনা মোস্তাফিজ দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য নেয়া যায়নি। আর আরেক পরীক্ষক সহকারী অধ্যাপক আশরাফী বিনতে আকরামের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।