১০ বছরেও হলো না প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড - দৈনিকশিক্ষা

১০ বছরেও হলো না প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

সাব্বির নেওয়াজ |

আগামী ১৮ নভেম্বর দশমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে চলেছে 'প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী' পরীক্ষা। প্রাথমিক স্তরের এ পরীক্ষায় চলতি বছর অংশ নিচ্ছে ৩১ লাখ ৯৬ হাজার শিক্ষার্থী। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সারাদেশের ২২ লাখ শিশু। এক দশকে এই স্তরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ লাখ। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে থেকে এ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের 'ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা'ও। অথচ দেশের সবচেয়ে বড় এই পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই।

অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১০ বছর ধরে 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড' নামে পৃথক একটি বোর্ডের কথা বলে আসছে। যদিও এর কোনো বাস্তবায়ন নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন বলেন, 'বোর্ড গঠনের প্রধান অন্তরায় অর্থ সংকট। একটি বোর্ড গঠন করার জন্য জনবল নিয়োগ ও অফিস ব্যবস্থাপনায় অনেক অর্থের প্রয়োজন। তা এ মন্ত্রণালয়ের নেই। তারপরও সম্ভাব্য ব্যয় ও জনবল কাঠামোর খসড়া তৈরির জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (ন্যাপ) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।' তিনি বলেন, 'বরাদ্দ পেলে অবকাঠামোসহ এ বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা যাবে।' 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর এসএসসি কিংবা এইচএসসি স্তরে ১০ থেকে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের পরীক্ষা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে মাদ্রাসা ও কারিগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা আরও দুটি শিক্ষা বোর্ড। অথচ, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে সারাদেশে এ দুটি পরীক্ষার প্রায় তিনগুণ পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও এর জন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড নেই। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ পরীক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক স্তরের জন্য আলাদা শিক্ষা বোর্ড না থাকায় প্রতি বছর সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রদানসহ পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছরের শেষ দুটি মাসে শিক্ষা কর্মকর্তারা বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ ও প্রতিটি বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার টার্গেট অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকেন। একই সময় এই পরীক্ষার কার্যক্রম চলায় হিমশিম খেতে হয় তাদের।

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের জন্য জোরেশোরে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনিই প্রথম এ বোর্ড গঠনের অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শুরু করেন। বর্তমান সচিব আবারও একই উদ্যোগ নিয়েছেন। 

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠনের জন্য তারা প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা সরকারের কাছে মোট দুটি শিক্ষা বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেবেন। একটি 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড', আরেকটি 'উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড'। 

আকরাম-আল-হাসান বলেন, 'প্রাথমিক এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি দিন দিনই বাড়ছে। অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের মাধ্যমে এ দুটি পর্যায়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং পাঠ্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের। পাঠ্যক্রম তৈরি, পরীক্ষা পরিচালনা ও সনদ বিতরণ তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।'

সচিব জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠনের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও 'প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড' গঠনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক স্তরের সবচেয়ে বড় এই পাবলিক পরীক্ষার ফল তৈরিতেও গত দুই বছরে অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়। ফলাফলের তালিকা তৈরি হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। তবে বৃত্তি পাওয়ার আশায় ভালো ফলের জন্য উত্তরপত্রে নম্বর বেশি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে গত দুই বছর পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। নিজের প্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দিতে প্রধান শিক্ষকদের অনেকে মরিয়া হয়ে ঘুষও দিয়ে থাকেন বলে মন্ত্রণালয়ে অনেক অভিযোগ এসেছে। এ কারণে চলতি বছর একই উপজেলার পরীক্ষার সব খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

সৌজন্যে: সমকাল

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0078740119934082