গত সপ্তাহে ১০ লাখেরও বেশি আমেরিকান বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী যে মার্কিন অর্থনীতিতে চেপে বসেছে, এ উপাত্তের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গৃহায়ণ বাজার, গাড়ি বিক্রি ও অর্থনীতির অন্যান্য খাতে বিপর্যয়ের জেরে এমনটা হয়েছে। খবর এপি।
যুক্তরাজ্যের শ্রম বিভাগ গত বৃহস্পতিবার জানায়, গত সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ৯৮ হাজার কমে ১১ লাখে দাঁড়িয়েছে। মার্চের শেষ সপ্তাহ বাদে এ নিয়ে প্রতি সপ্তাহেই বেকারত্ব সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি ছিল। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর আগে এ সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা সপ্তাহে সাত লাখের ওপরে যায়নি।
হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিকসের চিফ ইউএস ইকোনমিস্ট রুবিলা ফারুকি এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটেছে এবং এতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
ফারুকি আরো বলেন, শ্রমবাজারে স্থায়ী ক্ষতির ছাপ থেকে যাওয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে, তাতে আরোগ্য লাভের প্রক্রিয়া প্রলম্বিত হবে। মহামারীপূর্ব সময়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে পৌঁছাটা অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ায় পরিণত হচ্ছে।
বর্তমানে ১ কোটি ৪৫ লাখেরও বেশি আমেরিকান প্রথাগত বেকারত্ব সুবিধা গ্রহণ করছে, যা গত বছরের একই সময়ের ১৭ লাখের চেয়ে অনেক বেশি। লকডাউন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য অনেক আমেরিকানকেই এখন সরকারি প্রণোদনার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
গত ৩১ জুলাই নাগাদ বেকার আমেরিকানরা বেকারত্ব সুবিধার পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে সপ্তাহে অতিরিক্ত ৬০০ ডলার করে পেতেন। কিন্তু ওই সহায়তা প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার অসহনীয় পরিস্থিতিতে পড়েছে।
টেইলর লাভ (৩৪) নামে টেক্সাসের অস্টিন শহরের এক বেকার ম্যাসাজ থেরাপিস্ট তার বর্তমান হাল অবস্থা নিয়ে বলেন, আমার আয় একেবারে অর্ধেক কমে গেছে। আমাদের বন্দকি ঋণের সুদ দেয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন আমাদের অল্প যে সঞ্চয় রয়েছে, তাতে হাত দিতে হচ্ছে।
গত মার্চে বড় আকারের উদ্ধার প্যাকেজের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছলেও আরো সহায়তা প্যাকেজের জন্য সমঝোতায় পৌঁছতে হিমশিম খাচ্ছেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির আইনপ্রণেতারা। গত ৮ আগস্ট এক নির্বাহী আদেশে চলমান বেকারত্ব সুবিধা সম্প্রসারিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধা ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০০ ডলার করতে কেন্দ্র সরকারের সহায়তা গ্রহণে সম্মত হয়েছে অন্তত ৩৯টি অঙ্গরাজ্য।
আমেরিকার অর্থনীতিতে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে মহামারীটি। বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে বেশির ভাগ আমেরিকানকে। গত এপ্রিল থেকে জুনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংকুচিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশীয় উৎপাদন বা জিডিপি সংকোচন হয়েছে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। মার্চ ও এপ্রিলেই ২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে মার্কিন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো।