আগামী মাসে পুলিশ বাহিনীতে ১০ হাজার সদস্য নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশ বাহিনীতে বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটে ১৩ হাজার ৬৪১টি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী পুলিশ সদস্যদের আবাসন সমস্যা নিরসনে ৫৫টি মহিলা ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র ও গাড়ি প্রদান, ভবন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, উন্নত খাবারসসহ লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে পরিকল্পনা নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে, আগামী মাসে পুলিশ বাহিনীতে যে ১০ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে তার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ বাহিনীকে যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নতমানের অস্ত্র ও গাড়িসহ লজিস্টিক সাপোর্ট, গোয়েন্দা তথ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রযুক্তিগত তদন্ত ব্যবস্থার প্রসার, ভবন নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের জন্য উন্নত খাবার এবং পোশাক সরবরাহও রয়েছে এই পরিকল্পনায়। পুলিশ বাহিনীর সার্বিক সক্ষমতা বাড়ানো ও আধুনিকায়নের জন্য সরকার এই বাহিনীতে নতুন করে জনবল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের জন্য সর্বমোট ১৩ হাজার ৬৪১টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট পদ সৃষ্টির কার্যক্রম বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা দপ্তরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ে বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনায় বলা হয়, পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যানবাহন ও জলযান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুলিশ বাহিনীর গতিশীলতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষায়িত, দীর্ঘস্থায়ী, মানসম্পন্ন যানবাহন এবং জলযানের বিকল্প নেই। যানবাহন ক্রয়ে বাজেট কোড প্রতিবন্ধকতা দূর করে ব্যবহার উপযোগী টেকসই ও মানসম্পন্ন যানবাহন দ্রুততার সঙ্গে ক্রয় করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যে বৈঠকের আলোচনায় বলা হয়, খাদ্য ও পোশাক সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, প্রাধিকারপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য কাপড়, বুট, জুতা, বেল্ট, রিফ্লেক্টিং ভেস্ট, রেইন কোটসহ সব ধরনের পোশাক সামগ্রীর গুণগত মান উন্নত করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে, যা পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রেশনিং প্রথার মাধ্যমে চাল, গম বা আটা, ডাল, তেল, চিনি সরবরাহ করে থাকে, যা পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সরকারী গুদামের যে চাল সরবরাহ করা হয় তা অনেকাংশেই স্বাদহীন ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। ফলে ওই চাল খাওয়া যায় না। পুলিশ বাহিনীর জন্য ওয়ারেন্টি প্রথা শিথিল না থাকায় ভালমানের চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে একাধিকবার পত্রালাপ করা হলেও আশানুরূপ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এই সুবিধা পাওয়া গেলে এবং রেশনিং প্রথা আরও উন্নত করা হলে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গী তৎপরতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ কৌশলগত অপরাধ মোকাবেলায় সক্ষম ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সরঞ্জামাদি পুলিশ বাহিনীতে সংযোজন করা হলে পুলিশের সক্ষমতা আরও বাড়বে। পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে রাজস্ব বাজেটের অর্থায়নে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য আবাসিক টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন জেলা ও ইউনিটের ফোর্সের আবাসনের জন্য ব্যারাক, বিদ্যমান ব্যারাকের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ, থানা, ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্র, অফিস এবং ফোর্স ও অস্ত্রের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ইউনিটগুলোর সীমানা প্রাচীরসহ অত্যাবশ্যকীয় কাঠামো নির্মাণ করা। নারী পুলিশ সদস্যদের আবাসন সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন জেলায় ৫৫টি মহিলা ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক তদন্ত ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিবিধ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অপরাধের মাত্রা, ধরন ও কৌশলগত ভিন্নতার কারণে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
বর্তমান সরকার পুলিশ বাহিনীতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করছে। তবে এখনও অনেক সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুলিশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তারই ধারবাহিকতায় এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীকে সঙ্কটমুক্ত করে তোলার উদ্যোগ সংক্রান্ত আলোচনায় ধারাবাহিক সফলতা বজায় রাখার জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, যা পুলিশী অভিযানে ব্যাপক সাফল্য বয়ে এনেছে, দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ বাহিনীতে বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করার পাশাপাশি নিড বেজড ট্রেনিং, দেশ ও বিদেশে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ টিম, ফোর্স ও ব্যাটালিয়ন গঠন। এ ছাড়াও পুলিশ বাহিনীতে আধুনিক মানের অস্ত্রশস্ত্র, প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং উন্নতমানের রায়ট সামগ্রীসহ অন্যান্য সরঞ্জামের সম্প্রসারণ ঘটানোর মাধ্যমে পুলিশি কার্যক্রমে আরও গতি বাড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে পুলিশকে প্রযুক্তিগতভাবে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বায়নের ফলে অপরাধের মাত্রা ও প্রবণতা বেড়েছে। পুলিশ বাহিনীকে তথ্যপ্রযুক্তিগত এবং বিভিন্ন আধুনিক টেকনোলজিক্যাল ডিভাইসের ব্যবহারভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এতে সাইবার অপরাধ, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইত্যাদি মোকাবেলায় সুদক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত বাহিনী হিসেবে পুলিশের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে পুলিশের এডিশনাল আইজি শফিকুল ইসলামের দাবি।