১০৪ প্রতিষ্ঠানে ৮০৯ পরীক্ষার্থী, তবু শূন্যপাস : স্থগিত হতে পারে এমপিও - দৈনিকশিক্ষা

১০৪ প্রতিষ্ঠানে ৮০৯ পরীক্ষার্থী, তবু শূন্যপাস : স্থগিত হতে পারে এমপিও

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এবার এ্সএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে সারাদেশের ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এই ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি দাখিল মাদ্রাসা এবং ৫০টি ভোকেশনাল স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮১৯ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যে ৪৮টি মাদ্রাসার একজনও পাস করতে পারেনি, তার মধ্যে অন্তত নয়টি মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র একজন করে! সেই একজনকেও ১১ জন শিক্ষক মিলে পাস করাতে পারেননি।

বরাবরের মতোই প্রশ্ন উঠেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাহলে রেখে লাভ কী। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, মানহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান একীভূত করে দেওয়া যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীরাও মানসম্মত শিক্ষা পাবে, সরকারেরও অহেতুক অর্থ অপচয় রোধ হবে। 

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল গত ৩১ মে ঘোষণা করা হয়। এবার সারাদেশে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এ বছর মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন, যা গত বছর পেয়েছিল এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। এত ভালো ফলের পরও ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এমপিওভুক্তির জনবল কাঠামো অনুসারে মাধ্যমিক স্তরের (দশম শ্রেণি পর্যন্ত) প্রতিটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা একজন প্রধান শিক্ষক/সুপারসহ মোট ১২ জন শিক্ষক সরকার থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে আরও চারজন কর্মচারীও এমপিওভুক্ত হন। সরকারের বিপুল বিনিয়োগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে।

এমপিওভুক্তির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, 'শতভাগ ফেল করা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে আমরা তাদের এমপিওভুক্তি স্থগিত করে দেয়া হবে। পরবর্তী ফল ভালো না পর্যন্ত এমপিও স্থগিতই থাকবে।'

দৈনিক শিক্ষার কলারোয়া প্রতিনিধি জানান,  এ বছর সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শহীদ সত্য সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল মাত্র এক শিক্ষার্থী। ইংরেজিতে ফেল করেছে সে। বিস্ময়কর হলো, এ বিদ্যালয়ে ইংরেজি এবং গণিতের কোনো শিক্ষকই নেই। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আল হুদা আদর্শ দাখিল মাদ্রাসায় চলতি বছরে ২০ জন দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের সবাই গণিত, আরবি বা উভয় ক্ষেত্রেই ফেল করেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে গণিত ও আরবি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। 

এবার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার ১০০টি মাদ্রাসা দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গতবার মাদ্রাসাগুলোতে ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পাস করলেও এবার পাস করেছে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ। অতীতে প্রায় প্রতি বছরই মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার তুলনামূলক অন্য বছরের চেয়ে বেশি ছিল। ২০১৫ সালে এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। মাদ্রাসাগুলোর প্রতি মাদ্রাসা বোর্ড ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের নজরদারির অভাবে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।

দাখিল ফলের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঠাকুরগাঁওয়ের গেদুরা ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় দাখিল মাদ্রাসা, একই জেলার রানীশংকৈলের সিএস দাখিল মাদ্রাসা, দিনাজপুরের খানসামার মারগাঁও ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, জামালপুরের সূর্যনগর বসুন্ধরা আদর্শ মাদ্রাসা, মুক্তাগাছা বিন্যাকুড়ি দাখিল মাদ্রাসা, পটুয়াখালীর বেগম রাবেয়া ইয়াছিন বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, নাটোরের শেখপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, বাগাতিপাড়া থেকে মাত্র একজন করে পরীক্ষার্থী দাখিল অংশ নিয়েও ফেল করেছে।

এ ছাড়া ২২ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে ভোলার দৌলতখানের জয়নগর আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা থেকে। একই সংখ্যক পরীক্ষার্থীও সবাই ফেল করে যশোরের চৌগাছার মাকাপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে। ২০ পরীক্ষার্থী নিয়ে ফেল করেছে রাজশাহী ও রংপুরের আরও দুটি মাদ্রাসা। দুই পরীক্ষার্থীর মধ্যে দু'জনই ফেল করেছে চারটি মাদ্রাসার। আর তিন পরীক্ষার্থী নিয়ে সবাই ফেল করেছে পাঁচটি মাদ্রাসার।

দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার চকরামপুর হাই স্কুলটি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। এ বিদ্যালয়ের ১১ এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রতি মাসে সরকার থেকে বেতন-ভাতা পান। এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়েছিল মাত্র সাত শিক্ষার্থী। তাদের সবাই ফেল করেছে। ১১ শিক্ষক মিলেও সাত পরীক্ষার্থীকে পাস করাতে পারেননি! 

মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! - dainik shiksha শিক্ষা অধিদপ্তরে ডিজির রুটিন দায়িত্ব, জিয়া পরিষদ সদস্যদের পোয়াবারো! জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকের একযুগ চাকরির অভিযোগ ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ - dainik shiksha ‘পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে’ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062830448150635