১১ হাজার রাজাকারের নাম প্রকাশ কাল - দৈনিকশিক্ষা

১১ হাজার রাজাকারের নাম প্রকাশ কাল

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এ দেশের রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে; চালিয়েছে নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন। খবর দৈনিক সমকালের, লিখেছেন, আবু সালেহ রনি।  

বিস্তারিত: বিজয়ের ৪৯ বছরে এসে এবার স্বাধীনতাবিরোধী সেই রাজাকার বাহিনীর তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামীকাল রোববার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রায় ১১ হাজার রাজাকারের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সাড়ে আট হাজার রাজাকারের তালিকা আপলোড হয়েছে, এখনও আপলোড অব্যাহত আছে। আপলোড শেষে তালিকাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, 'স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম, পরিচয় ও ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্যই তালিকা প্রকাশ করা হবে। আশা করছি, ১১ থেকে ১২ হাজার রাজাকারের নাম ও তথ্যাদি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে। পর্যায়ক্রমে অন্য রাজাকারদের নামও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।'

রাজাকারের তথ্য সংগ্রহের উৎস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছেন বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয়, ভূমিকাসহ তথ্যাদি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল। সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি নতুন কোনো তালিকা নয়।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তথ্যানুযায়ী, একাত্তরের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তা দিতে গঠিত হয় রাজাকার বাহিনী। খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থি কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। পরে দেশের অন্যান্য অংশেও গড়ে তোলা হয় এই বাহিনী। প্রথম পর্যায়ে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। একাত্তরের ১ জুন পাকিস্তানের জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন। তবে এর নেতৃত্ব ছিল পাকিস্থানপন্থি স্থানীয় নেতাদের হাতে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশবলে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। এর সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০ হাজার।

এ ছাড়াও পাকিস্তান সরকার বাঙালি নিধনে একইভাবে আলবদর ও আলশামস বাহিনীও গঠন করে। তখন গ্রামগঞ্জে মেম্বারদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ওলামাসহ পাকিস্তানের সমর্থক অনেক দলের নেতাকর্মীরা রাজাকারসহ অন্যান্য বাহিনীতে যোগ দেয়। তবে স্বাধীনতাবিরোধী এই বাহিনীগুলো সাধারণ অর্থে রাজাকার হিসেবেই পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার পর থেকেই এসব বাহিনীর তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের দাবি ওঠে। অবশেষে স্বাধীনতার ৪৯ বছরে এসে সেই দাবি বাস্তবায়নের পথে সরকারিভাবে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে। তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৪ সালে। জানা গেছে, প্রকাশিতব্য তালিকায় পাকিস্তান সরকারের বেতনভোগী ৩৯৯ জনের নামও থাকছে।

রাজাকার বাহিনীর তালিকা প্রকাশকে স্বাগত জানান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি  বলেন, 'রাজাকারসহ ঘাতক বাহিনীর তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছি। দেরিতে হলেও সেই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে এখানে থেমে থাকলে হবে না। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমরাধিনায়ক একে নিয়াজি তার বইয়ে লিখেছেন, রাজাকার বাহিনীতে তারা ৫০ হাজার সদস্য নিয়োগ করেছিলেন। তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০ হাজার রাজাকার নৃশংস ভূমিকা রেখেছে। এখন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। যখনই কোনো রাজাকারের নাম-পরিচয় পাওয়া যাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যুক্ত করতে হবে। এটা বলা যাবে না যে, তালিকাভুক্তির কার্যক্রম শেষ হয়েছে।' একইভাবে ঘাতক বাহিনীর অন্য সদস্যের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের বিষয়েও জোর দেন তিনি।

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এমএ হাসান বলেন, রাজাকারদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ তাদেরই ছিল। তারা অনেক আগেই এই তালিকা তৈরি করেন। সরকার নতুন করে তালিকাটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, এটি প্রশংসাযোগ্য।' তার মতে, পিস কমিটির সদস্যসহ আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা উচিত।

তিনি বলেন, 'এমন আইন হওয়া উচিত, যাতে তারা নিজেরা বা তাদের উত্তরসূরি কেউ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবস্থান নিতে না পারে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে না, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সত্যিকার অর্থে সম্মান করতে ব্যর্থ। তারা সামগ্রিকভাবে মানবমর্যাদা ও সাম্যে বিশ্বাস করে না। তারা এ দেশের কেউ নয়।'

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0081019401550293