এবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি মাদরাসার ১২ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব-১১-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম ভুঁইগড় মাহমুদপুর পাকার মাথা এলাকার ওই মাদরাসায় অভিযান চালিয়ে ধর্ষক মাওলানা আল আমিনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে। সে ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। এ সময় গ্রেফতার আল আমিনের মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত কম্পিউটার থেকে একাধিক পর্নো ছবি ও ভিডিও জব্দ করা হয়। গ্রেফতার আল আমিন কুমিল্লার মুরাদনগরের দীঘিরপাড় ভুঁইয়াপাড়ার সন্তান।
র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, কিছুদিন পূর্বে সিরিয়াল রেপিস্ট আশরাফুল আরিফকে গ্রেফতারের ঘটনায় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি সংবাদের ভিডিও ক্লিপ তার ফেসবুক ওয়ালে আপলোড করেছিলেন। গত দুইদিন পূর্বে বাইতুল হুদা ক্যাডেট মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী এবং তার মা ফেসবুকে ভিডিওটি দেখেছিল। এ সময় হঠাৎ আলেপ উদ্দিনের ওয়ালে থাকা ভিডিওটি দেখে ওই মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী তার মাকে বলেছিল যে, মা আমাদের হুজুরকে কেন গ্রেফতার করে না র্যাব, আমাদের হুজুর আমাদের সাথে এরকম এরকম করে। আমার ওই মাদরাসায় যেতে ভালো লাগে না। আমি মাদরাসায় আর যাব না। পরে বিষয়টি ওই মেয়ের মা র্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের সাথে শেয়ার করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে ওই মেয়ের জবানবন্দি নেন এবং কৌশলে তারা শিক্ষককে গ্রেফতার করেন।
এদিকে মাদরাসা ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর শত শত এলাকাবাসী ও উৎসুক মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ধর্ষক আল আমিনের ফাঁসি ও মাদরাসা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে।
নারী অভিভাবকরা বলেন, আমরা এখন কোন নিরাপত্তায় সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাবো? এমন একজন হুজুর যদি এ কাজ করতে পারে এরপর আর কার ওপর বিশ্বাস থাকবে?
দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিং করে র্যাব-১১ এর সিও লে. কর্নেল কাজী শামসের উদ্দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসলাম ও ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আব্দুল আজিজ প্রমুখ।
জানা গেছে, ফতুল্লার মাহমুদনগর এলাকার ফারুক হোসেনের একটি সেমিপাকা বাড়ি ভাড়া নিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাইতুল হুদা নামে একটি মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে আল আমিন। ওই মাদরাসায় সে ছাড়াও দুই পুরুষ শিক্ষক ও ৪ নারী শিক্ষক রয়েছেন। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাদরাসাটি খোলা থাকত। অনাবাসিক মাদরাসায় ৫০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করত। মাদরাসার ভেতরেই একটি কক্ষে আল আমিন স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করত। তবে আল আমিনের এমন অপকর্মের বিষয়টি তার স্ত্রী বা অন্য শিক্ষকরা কেউ টের পাননি। মাদরাসার ভেতরে আল আমিন অধ্যক্ষ হিসেবে নিজের ব্যবহৃত কক্ষে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে বলে র্যাবকে জানিয়েছে। এ জন্য আল আমিন দুপুরে টিফিনের সময় অথবা মাদরাসার ছুটির পরের সময় বেছে নিত।