নীলফামারীর জলঢাকায় পরিচালনা কমিটি গঠনে জটিলতা ও সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করায় ১৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না গোলনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বর্তমান করোনা ভাইরাসের মহামারিকালে বেতন বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষকরা। জীবন ও পরিবার পরিজন বাঁচাতে অনেকে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন, এমনকি কেউ কেউ বাঁধা পড়েছেন দাদন ব্যবসায়ীর কাছে।
মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচনের মাধ্যমে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি নির্বাচিত করা হয়। কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতার জটিলতার কারণে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ওই কমিটির সভাপতির পদ বাতিল করে একটি পত্র প্রেরণ করেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। তখন থেকে সভাপতির পদ শূন্য হওয়ায় চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৩ মাসের বেতন, ধর্মীয় দুটি বোনাস ও বৈশাখীভাতা তুলতে পারেনি ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এমনকি বেতন বন্ধ থাকায় করোনা ভাইরাসে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে একদিনের বেতন জমা দিতে পারেনি ওই মাদরাসার শিক্ষক কর্মচারীরা।
মাদরাসা সূত্রে আরও জানা যায়, আরবি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বের কমিটির সভাপতির পদ বাতিল করার পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি চেয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করেন মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোসাইন আহমাদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) গভর্নিং বডির সভাপতি ও জলঢাকা উপজেলা মাধ্যামিক শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার এস. এস. মাহমুদ ও উপ-রেজিস্ট্রার ড. এম. আবু হানিফা স্বাক্ষরিত (স্মারক নং-ইআবি/রেজি/প্রশা/ফা.গ.ব/র-৯২/২০১৬/১৮৬) একটি চিঠি মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয় এবং তা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মাদরাসায় সভা করে পূর্ণাঙ্গ গভর্নিং বডি অনুমোদনের জন্য আরবি বিশ^বিদ্যালয়ে দাখিল করতে বলা হয়।
আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো ওই চিঠি নিয়ে কয়েক মাস যাবত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলামের (শিক্ষা ও আইসিটি) কাছে গেলে তিনি গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বভার না নেয়ায় বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না বলে জানান মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোসাইন আহমাদ।
মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম, অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান ও নৈশপ্রহরী আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘দীর্ঘ ১৩ মাস বেতন তুলতে না পারায় পরিবার -পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা। এর আগে দুটি ঈদ আমরা করতে পারিনি, আবারও কয়েকদিন পরে ঈদ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাসের থাবা। এই দুর্দিনেও বেতন না পেলে আমাদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে সভাপতি হিসেবে গ্রহণ না করায় দির্ঘদিন ধরে বেতন তুলতে পারছেন না ওই মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজহারুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি কোনও চিঠি পাইনি। তাই সভাপতি পদ গ্রহণ করিনি। তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে একটি চিঠি দেখিয়েছে।’