১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে, পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চলছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহার দায়িত্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান চলাকালীন সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যার খবর পৌঁছালে সঙ্গে সঙ্গে জোহার নির্দেশে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়। সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার বিচার চেয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি চেয়ে ছাত্ররা ঐদিনই সমগ্র ক্যামপাস মিছিলে প্রকমিপত করে।
১৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব রাত্রির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার ছাত্রছাত্রী সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মিছিল বের করে শহরের দিকে অগ্রসর হবার চেষ্টা করছিল। পুলিশ ও ইপিআর মিছিলে বাধা দেয়, সেনাবাহিনীর জোয়ানরাও মিছিল ঠেকাতে ছাত্রদের দিকে রাইফেল তাক করে প্রস্তুত। ছাত্ররা কর্মরত সেনা অফিসারদের সঙ্গে তীব্র বিতর্কে লিপ্ত হয়। মিছিল অগ্রসর হলে গুলি করার হুমকি দিলে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ড. জোহা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে একবার ছাত্রদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা আবার কখনো কর্মরত সেনা কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝাচ্ছিলেন। ড. জোহা সামরিক কর্মকর্তাকে বারবার বলছিলেন, ‘প্লিজ ডোন্ট ফায়ার।
আমার ছাত্ররা এখনই চলে যাবে ক্যামপাসের দিকে।’ কিন্ু্ত অবাঙালি সেনা অফিসারটি বারবার জোয়ানদের গুলি করার জন্য প্রস্তুত হতে বলছিল। পরিস্থিতি যখন শান্ত হওয়ার পথে তখনই হঠাত্ গুলির শব্দ। দুপুর বারোটার দিকে ক্যামপাসে খবর আসে—ড. জোহাকে কাছ থেকে গুলি পরে বেয়নেট চার্জ করে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে এবং তিনি মরণাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী পৌরসভার একটি পুলিশ ভ্যানে প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে পড়ে আছেন। পরে ডিসি সাহেবসহ কিছু সিভিল অফিসার সেখানে এলে তাঁদের নির্দেশে ড. জোহাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ড. জোহা ইন্তেকাল করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম বুদ্ধিজীবী হিসাবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। বাংলা ভাষা আন্দোলনেও তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। প্রায় পাঁচ দশক হয়ে যাচ্ছে; ড. জোহার হত্যাকাণ্ডের দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হলো না। ড. জোহার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়